মায়ার টিকটকের ভিডিও যেভাবে বদলে দিচ্ছে প্রতিবন্ধীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
এ-লেভেল শেষ করার পর সাংবাদিকতা পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ব্রিটেনের মিল্টন কেইন্সের কাছে বসবাসরত মায়া জেরমিন্সকা। আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কিংবা নিজের ক্যারিয়ার করার স্বপ্ন বুনলেও, তার জীবন যাত্রা স্বাভাবিক নয়। তিনি একজন প্রতিবন্ধী।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ–২ নামের এক জিনগত রোগে আক্রান্ত মায়া। এই রোগে ধীরে ধীরে পেশি দুর্বল হয়ে যায়। তবে, প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে বেশ জনপ্রিয় তিনি। সমাজে প্রতিবন্ধীদের ঘিরে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে টিকটকে নিজের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ভিডিও করে অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের জীবনে প্রভাব আনাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
২০২২ সালে মায়া শখ হিসেবে ভিডিও বানানো শুরু করেন টিকতকে। তবে ধীরে ধীরে ভিডিও বানানোকে সিরিয়াসভাবে নিতে শুরু করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়া শুরু করি। প্রথমে ভাবতাম আমি একজন প্রতিবন্ধী। আমার ভিডিও কেউ হয়তো দেখবে না। আমি ভেবেছিলাম, আমি নিজেই যদি এভাবে অনুভব করি তবে অন্যরাও নিশ্চয়ই একইভাবে ভাবছে। নিজের শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ভালো কিছু ভিডিও বানানোর অনুপ্রেরণা নিজের মধ্যে ভীষণভাবে অনুভব করতে থাকি।'
তার এই দৃঢ় মনোভাব এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে টিকটকে প্রায় ১২,৫০০ অনুসারী এনে দিয়েছে, আর ভিডিওগুলোতে মিলেছে অর্ধ মিলিয়নের বেশি লাইক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে নিজের প্রতিবন্ধী জীবনযাত্রা শেয়ার করা মায়া জানিয়েছেন, অন্য প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছি।
শুরুর দিকে সমালোচনার ভয়ে মায়া দ্বিধায় ছিলেন এবং বন্ধুদেরও তার ভিডিও দেখতে দেননি। তবে প্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীদের কাছ থেকে পাওয়া ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
স্টেরিওটাইপ ভাঙার চেষ্টায় মায়া
মায়ার কনটেন্টে থাকে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার দৃশ্য—স্কুল, হাসপাতাল ভিজিট ইত্যাদি।
'আমি চাই মানুষ দেখুক, আমার জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক, যদিও কিছু ভিন্নতা আছে।' মায়া তার কনটেন্টে প্রতিবন্ধকতা, বিউটি ও লাইফস্টাইল মিলিয়ে তুলে ধরেন দর্শকদের সামনে। তবে জোর করে নয়; সুন্দরকিছু সবাইকে উপহার দেয়ার উদ্দেশে।
তিনি বলেন, 'আমি চাই আমার ভিডিওর মাধ্যমে মানুষজনের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে থাকা নেতিবাচক ধারণা বদলাতে। এটা দারুণ যে, শুধু একটি ভিডিওই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে।'
বিছানা থেকে ওঠা, পোশাক পরা ও ব্যক্তিগত যত্ন নেয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়। তবে, মায়ার বাড়িতে আছে রিমোট-কন্ট্রোল মেডিকেল বেড, লিফট এবং হোইস্ট মেশিন।
তবে প্রবেশগম্যতার সমস্যা—যেমন র্যাম্প বা নিচু ফুটপাত না থাকা—কখনোই তাকে থামাতে পারেনি। তিনি বলেন, 'আমার প্রতিবন্ধকতা আমাকে কোনো কাজ থেকে আটকে রাখতে পারে না।'
মায়া বর্তমানে বিদ্যুৎচালিত আইবট হুইলচেয়ার কেনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন, যেটির দাম ৫২ হাজার পাউন্ডের বেশি। এই চেয়ার সফত্সটওয়টওয়্যারের সাহায্যে বেয়ে উঠতে পারে এবং অসমতল জায়গায় চলাচলে আরও উপযোগী।
সূত্র: বিবিসি নিউজ।
/এআই
মন্তব্য করুন