গণহত্যার বিচার দাবিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

|

মিয়ানমারের রাখাইন গণহত্যার দুই বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে কক্সবাজারে বিশাল সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে তারা। আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোনাজাতও করে তারা।

রোববার উখিয়ার ক্যাম্প ৪ এর বর্ধিত অংশে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নিরাপদে নিজভূমিতে ফিরতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এদিকে রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় সমবেদনা জানিয়েছিল যেসব মানুষ, দু’বছরে পাল্টে গেছে তাদের অনেকের মনোভাব। এখন রোহিঙ্গাদের বিদায় করতে পারলেই যেন স্থানীয়দের স্বস্তি।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ভিটেবাড়ি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেয়া হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে। অন্যথায় তারা যাবে না।

তাদের দাবি, রোহিঙ্গা মুসলমানদের আগে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে মিয়ানমারকে। এরপর বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা একসঙ্গেই ঘরে ফিরে যাবে। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতেও রাজি আছেন বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানান।

এই দুই বছরে বদলে গেছে ক্যাম্পের অনেক কিছু। আশ্রয় শিবিরে রীতিমতো ঘরগেরস্থালি সাজিয়ে নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। দুই বছর আগে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যা-নির্যাতনে বিপর্যস্ত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ তারা ফিরে পেয়েছে মনবল। পূরণ হচ্ছে সব মৌলিক সব চাহিদা।

এসময় বক্তারা আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। কিন্তু প্রত্যাবাসন হতে হবে- একসঙ্গে। সেই সাথে নিশ্চিত করতে হবে নিরাপত্তা।

সমাবেশে বক্তারা তুলে ধরেন সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি। মিয়ানমারে সংঘঠিত খুন-ধর্ষণ-নির্যাতনে দায়ীদের বিচার দাবি করেন তারা।

রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ ঘিরে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। মধুরছড়া আশ্রয় শিবিরের ইনচার্জ মাইন উদ্দিন বলেন, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার তৎপর ছিল।

উখিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর জানান, সকাল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশ করে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে আশ্রিত আরও ৪ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা রয়েছে কক্সবাজারে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন উখিয়া-টেকনাফে।

এদিকে দিনদিন রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা। আছে নিজেদের সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার শঙ্কা। ভর করেছে- জমিজমা ও ব্যবসাবাণিজ্য হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্ক।

স্থানীয়রা চান, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হোক তাদের দেশ মিয়ানমারে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply