অগ্নিঝুঁকিতে রাজধানীর দুয়ারীপাড়া বস্তি

|

আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝিলপাড় বস্তির আদলেই গড়ে উঠেছে মিরপুরের দুয়ারীপাড়া বস্তি। ঝিলপাড় থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত এ বস্তি। একই ওয়ার্ডে পড়েছে।

পুরো বস্তিতে রয়েছে কয়েক হাজার অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ। এসব সংযোগ প্লাস্টিকের পাইপ ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার দিয়ে টানা হয়েছে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুরের রূপনগর টিনশেড ১৬ নং রোডের পাশেই অবস্থিত দুয়ারীপাড়া বস্তি। দুয়ারীপাড়া বস্তির কিছু অংশ ওয়াকফ স্টেট ও কিছু অংশ স্থানীয় পুনর্বাসন জোনে পড়েছে। পুরো বস্তিতে দুই হাজারের মতো ঘর রয়েছে।

১০ নম্বর রোড থেকে উত্তর দিকে ঝিলপাড় পর্যন্ত বস্তির এ অংশ স্থানীয় পুনর্বাসন জোন হিসেবে পরিচিত। কয়েক হাজার পরিবার এখানে বসবাস করেন। বস্তির এ অংশে চলাচলের কোনো রাস্তা নেই।

সরু রাস্তায় পাশাপাশি দু’জন মানুষ চলতে পারে না। বস্তির চার পাশে রয়েছে অবৈধ মার্কেট ও বাজার। কোনো যানবাহন ঢোকার রাস্তা নেই।

‘ক’ ব্লক ১ নম্বর রোড থেকে ১০ নম্বর রোড পর্যন্ত রাস্তা থাকলেও সেগুলো সরু ও চলাচলের অনুপোযোগী।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, দুয়ারীপাড়া বস্তিতে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা আগুন ধরলে যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকবে সে উপায় নেই।

অবৈধ বাজার ও মার্কেট রাস্তা ব্লক করে রেখেছে। তিনি বলেন, ঝিলপাড়ের বস্তির মতোই দুয়ারীপাড়া বস্তিতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ এখানেও অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি রয়েছে।

অসাবধানতাবশত আগুন লাগলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়বে। আগুন লাগলে গাড়ি এলেও তা ঢুকতে পারবে না। রাস্তা নেই। বস্তির কয়েকটি ঘর ঘুরে দেখা যায়, পাতলা প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে।

বস্তির কয়েকটি জায়গায় অরক্ষিতভাবে গ্যাসের রাইজার লাগানো রয়েছে। গ্যাসের অনেক সংযোগে রয়েছে লুজ কানেকশন। একটি পাইপ দিয়ে একাধিক সংযোগ দেয়া হয়েছে।

নিম্নমানের তার দিয়ে এলোমেলোভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এতে যে কোনো সময় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।

দুয়ারীপাড়া বস্তির ক ব্লকের ৮ নম্বর রোডের মাঝামাঝিতে সন্ধ্যার পর মাদক সেবন ও বেচাকেনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলেও প্রতিকার পাননি।

জানা যায়, অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি বস্তিতে কয়েক হাজার অবৈধ পানির লাইন রয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি দুয়ারীপাড়া বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন।

স্থানীয়রা জানান, বস্তিতে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে কয়েক হাজার ঘরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে।

ঘরপ্রতি গ্যাস সংযোগ বাবদ নেয়া হয় এক হাজার টাকা । বস্তির বাসিন্দা জিকু দেওয়ান বলেন, ৬ মাস আগে তিতাসের এক অভিযানে বস্তিতে গ্যাসের লাইন বিছিন্ন করা হয়। পরের দিন লতিফ মোল্লা মিটিং ডাকেন।

তিনি পুনরায় গ্যাস সংযোগের জন্য ৬৪ হাজার টাকা আদায় করেন। বাধ্য হয়ে সবাই টাকা দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বস্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির জন্য লতিফ মোল্লা, নাজমা ও মোবারক মেম্বারকে টাকা দিতে হয়।

বস্তির অবৈধ সংযোগের আয় থেকে রূপনগর থানায় প্রতি মাসে টাকা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারদলীয় এক নেতা।

এ ব্যাপারে লতিফ মোল্লা বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই একটি গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন মিরপুর জোনের উপমহাব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, দুয়ারীপাড়া বস্তিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পল্লবী জোনের এসি এসএম শামীম বলেন, অবৈধ সংযোগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই করা হবে।

অবৈধ সংযোগ থেকে থানায় টাকা নেয়া হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডে যত বস্তি রয়েছে সেগুলোর অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। আশা করি দ্রুত তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply