বনশ্রী-রামপুরা খাল: কচুরিপানা ও আবর্জনার স্তূপ

|

বনশ্রী-রামপুরা খালটি কচুরিপানা ও আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে মশার উপদ্রব বাড়ছেই। বৃদ্ধি পাচ্ছে মশার প্রজননক্ষেত্র। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খালের দুই পাড়েই নির্বিচারে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় দিন দিন এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। মশার উৎপাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এ সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩ নং ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত মেরাদিয়া বাজার থেকে রামপুরা স্লুইসগেট পর্যন্ত বনশ্রী-রামপুরা খালটি নড়াই নদ নামে পরিচিত।

বহু বছর ধরেই এ খালটি পানি নিষ্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ হাতিরঝিলের চার পাশের লোকালয়ের গৃহস্থালি, পয়োবর্জ্য, ড্রেনের পানি ও বৃষ্টির পানি রামপুরা স্লুইসগেটের মাধ্যমে এই নড়াই নদে আসে।

পরে ময়লা ও কালচে দুর্গন্ধযুুক্ত পানি প্রবাহিত হয়ে বালু নদীসহ অভ্যন্তরীণ খালের মাধ্যমে আশপাশের নিুাঞ্চলের পানির সঙ্গে মিশে যায়।

বনশ্রী-রামপুরা খালের পাশে ডেমরা-রামপুরা সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ খালটি নিয়মিত পরিষ্কার করছে না বলে এটি বর্তমানে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে বুধবার মেরাদিয়া হাটে আসেন হাজার হাজার মানুষ ও অস্থায়ী দোকানদার। দিনভর চলে বিকিকিনি।

তাই সাপ্তাহিক হাটে প্রতিদিনকার বেচাকেনায় যত ময়লা-আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট থাকে সেগুলো খালের পাড়েই ফেলেন সংশ্লিষ্টরা। কোরবানির হাটে মরা গরুও ফেলা হয়েছে।

সেগুলো ভাসতে দেখা গেছে। তাছাড়া এ খালে জন্মানো কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে না বলে সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এমনিতেই এ খালের পানি দুর্গন্ধযুক্ত, তার ওপর বাজারের আবর্জনা ও খালের দুই পাড়ে মানুষের ফেলা আবর্জনার দুর্গন্ধ চারদিকে ভেসে বেড়ায়।

ডিএসসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত নড়াই নদের পাশে মেরাদিয়া হাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ইয়াগামাতা হাসপাতাল, রামপুরা থানা সংলগ্ন আমেরিকান হাসপাতাল, বনশ্রী ই-ব্লকে ফরাজি হাসপাতাল, এফ-ব্লকে অ্যাডভান্স হাসপাতাল ও বসতি মা ও শিশু হাসপাতাল ও জি-ব্লকে আল রাজি হাসপাতাল।

এসব হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রতিনিয়ত খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও মশার যন্ত্রণায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে বনশ্রী বি-ব্লকে রয়েছে হলি ক্রিসেন্ট স্কুল, ই-ব্লকে ডেক্সেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বসতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এফ-ব্লকে রয়েছে মনপুরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মমতাজ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডি-ব্লকে রয়েছে নামজাদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আবদুর রাজ্জাক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও এইচ-ব্লকে রয়েছে ফাইজুর রহমান আইডিয়াল ইন্সটিটিউট।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজারো শিক্ষার্থী মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। নাবিলা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিন মশার কামড় খেতে হয় স্কুলে।

ক্লাসরুমের অন্ধকার কোনায় কোনায় মশা ঘুরে বেড়ায়। অনেক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। আর খালের পচা পানির দুর্গন্ধ নাকে এলে শরীর খারাপ হয়ে যায়। ডিএসসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেন মহসিন যুগান্তরকে বলেন, আমার ওয়ার্ড এলাকায় সর্বত্রই নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

ওয়ার্ডের সীমানা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত রামপুরা-বনশ্রী-রামপুরা খালের পাড়েও নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে খালের মধ্যে কচুরিপানাসহ আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের নয়।

কিন্তু নিয়মিত খাল পরিষ্কারের বিষয়ে আমরা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তারা যদি ত্বরিত ব্যবস্থা নেয় তাহলে খালের মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসসহ মশার উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে।
সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply