জাবি তে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে গোলাম রাব্বানীর ফোনালাপ ফাঁস

|

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলা জাবি ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় এবং ফোনালাপ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে যমুনা টেলিভিশন।

প্রথমজন হলেন হামজা রহমান অন্তর সহ-সভাপতি আর পরের জন সাদ্দাম হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

গণমাধ্যমের খবরে ৯ আগস্ট উপাচার্যের সঙ্গে টাকা ভাগের বৈঠকে যে চার ছাত্রলীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে প্রকাশ হয়েছে ফোনালাপকারী ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম তাদের মধ্যে একজন।

ফোন আলাপে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সহ সভাপতি নিয়ামুল হক তাজ, ছিলেন ওই মিটিংয়ে।

একই সঙ্গে এই দুর্নীতির সঙ্গে উপাচার্যের ছেলে, স্বামী, ব্যক্তিগত সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়েছে। ৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ওই অডিওতে কীভাবে, কারা, কত টাকা পেয়েছে সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

গণমাধ্যম ও শাখা ছাত্রলীগের সূত্রমতে, ৯ আগস্ট যে চারজন ভিসির বাসায় টাকা ভাঁটোয়ারার জন্য গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সাদ্দাম হোসেনও ছিলেন।

অডিও শুনে বোঝা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর রাব্বানীকে ফোন দেন। ফোন রিসিভ করে রাব্বানী বলেন, ‘হ্যালো অন্তর! টাকা নেয়ার সময় কে কে ছিল? তখন অন্তর বলেন, ‘জুয়েল (শাখা সভাপতি), চঞ্চল (সাধারণ সম্পাদক), সাদ্দাম (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক)।’

টাকাটা কোথায় বসে দিয়েছে রাব্বানীর এমন প্রশ্নে অন্তর বলেন, ভিসি ম্যামের বাসায়। অন্তর তখন বলেন, সাদ্দাম ভাই আমার পাশে আছে কথা বলবে? রাব্বানী সম্মতি দিলে কথা বলা শুরু করেন সাদ্দাম।

রাব্বানী ও সাদ্দামের কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল-

শুরুতে সাদ্দাম ও রাব্বানীর মাঝে কুশলাদি বিনিময় হয়।

রাব্বানী: কী খবর ভাই?

সাদ্দাম: ভাই খবর তো আমি জানাইছি, খবর ভালো না বেশি একটা। আমি তো আপনাকে জানাইছি ভাই। আমি, তাজ (নিয়ামুল হাসান তাজ-সহ-সভাপতি), জুয়েল ও চঞ্চল এই চারজন ছিলাম ভাই ওই মিটিংয়ের সময় (টাকা ভাঁগবাটোয়ারার সময় ভিসির বাসায়)।

রাব্বানী: ম্যাম তো বলছে এ আন্দোলনও নাকি আমরা করাইছি! আন্দোলন কারা করছে সেটাও তো আমরা জানি না।

সাদ্দাম: বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের উপর সবকিছু দিয়া নিজের ফ্যামিলিরে সেভ করতে চাচ্ছে।
রাব্বানী: আচ্ছা যখন টাকাটা দিছে তখন তুই ছিলি না? সাদ্দাম: হ্যাঁ, ভাই আমি ছিলাম।

রাব্বানী: টাকাটা দিছে কিভাবে, ম্যাম নিজেই দিছে, অন্য কেউ ছিল না? সাদ্দাম: ওখানে হচ্ছে ভাই আর কেউই ছিল না। ম্যাম এবং তার পরিবার হচ্ছে আমাদের সঙ্গে ডিলিংসটা করছে। সে হচ্ছে টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছে দিছে।

রাব্বানী: হলে পৌঁছে দিছে টাকা? সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ একটা গাড়িতে করে এক লোক এসে দিয়ে গেছে।

রাব্বানী: কয় টাকা দিছে?

সাদ্দাম: আমাদের বলছে এক কোটি। আমরা বাকিটা জানি না, জুয়েল আর চঞ্চলের সঙ্গে আলাদা সিটিং হইতে পারে।

রাব্বানী: আমি শুনলাম এক কোটি ষাট।

সাদ্দাম: ওইটা ভাই ষাইটেরটা আমরা জানি না। উনি এক কোটি ভাগ করে দিছে। যে পঞ্চাশ হচ্ছে জুয়েলের, পঁচিশ আমাদের আর পঁচিশ চঞ্চলের।
রাব্বানী: ও ম্যাডাম এভাবে ভাগ করে দিছে? জুয়েল ভালো ছেলে এ জন্য পঞ্চাশ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে এ জন্য পঁচিশ? সাদ্দাম: হ্যাঁ। ”ঞ্চল আমাদের তো বাদ দিতে পারে নাই। ঝামেলা এড়ানোর জন্য বা…

রাব্বানী: ও চঞ্চলের ভাগেরটাই তোরা পাইছস? সাদ্দাম: হ্যাঁ, চঞ্চলের ওখান থেকেই, আমরা বলছি যে ২৫% আমাদের দেয়া লাগবে। তারা হচ্ছে ভাই তাহলে আমাদেরকে না জানায়া তাদেরকে আলাদা ৬০ লাখ টাকা দিছে, এটা হইতে পারে।

রাব্বানী: ও তাহলে তোদেরকে না জানায়া দিছে?

সাদ্দাম: হ্যাঁ হ্যাঁ আমরা এটা জানি না আমরা এক কোটির হিসাব জানি।

রাব্বানী: তোমার ম্যাডাম যে আমাদের নাম জড়াইলো এখানে, টাকার ব্যাপারে আমার বা শোভনের কোনো আইডিয়াই তো নাই।

সাদ্দাম: ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে।

রাব্বানী: আমিও বুঝতেছি নিজে সেভ হওয়ার জন্য ফ্যামিলি সেভ করার জন্য। এ ছয়টা কাজ বেসিক্যালি ঠিকাদারদের সঙ্গে ডিল করছে কে?

সাদ্দাম: ভাই মূলত ডিলটিল করছে তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই, আর পিডি আর তার স্বামী -এ চারজন।
রাব্বানী: হাজবেন্ড-ছেলে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নাসির আর পিএস (ভিসির একান্ত সচিব) সানোয়ার? ও তারাই আগে থেকে ছয়টা কোম্পানি ঠিক করে রেখেছে?

সাদ্দাম: হ্যাঁ, শুরু থেকেই তারা সবকিছু করছে।

রাব্বানী: টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিল? ভিসি তো থাকতে পারে না।

সাদ্দাম: হ্যাঁ সে ছিল। প্রথমত সে তো সবাইরে ফেরতটেরত পাঠায়া দিল না! শিডিউল ছিনায়া টিনায়া নিচ্ছিল। পরে হচ্ছে আমরা বলছি সবাইরে কিনতে দিতে হবে সবাইরেই ড্রপ করতে দিতে হবে। তখন হচ্ছে ড্রপ সবাইরেই করাইছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে নিজ হাতে সব বিষয়গুলা করছে।
পরে আবার কথা বলবেন বলে রাব্বানী ফোনালাপ শেষ করেন।

অডিওটি রাব্বানীর সঙ্গে নিজের কথোপকথন বলে নিশ্চিত করেছেন সাদ্দাম। তবে কবে কথা বলেছে সেটি নিশ্চিত করতে না পারলেও হামজা রাহমান অন্তরের ফোনে কথা বলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply