মিরপুর ১১: পার্কের জায়গায় মার্কেট

|

নগরীর মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় পার্কের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে মার্কেট। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নামে এ মার্কেটের নামকরণ করা হয়েছে নান্নু মার্কেট। মার্কেটের এক অংশে রয়েছে কাউন্সিলর কার্যালয়। পাশাপাশি মার্কেটের জায়গায় কক্ষ বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন ওই কাউন্সিলর।

স্থানীয় বাসিন্দা রজব, জুয়েল, বাপ্পী, ভাসানী, খলিল, জাকিরসহ কয়েকজন জানান, মিরপুর ১১ নম্বর এ ব্লকে পার্কের জন্য নির্ধারিত সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে এ মার্কেট গড়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সালের পর ধীরে ধীরে পার্ক দখল করে মার্কেট বানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, মিরপুর ১১ নম্বর এ ব্লকে পার্কের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ করা জায়গা রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

মিরপুর ১১ নম্বর এ ব্লকের ৮নং ও ৬নং রোডে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম পাশে পার্কের জায়গা দখল করে রয়েছে মার্কেট। মার্কেটের নাম নান্নু মার্কেট। মার্কেটের বেশির ভাগ দোকান এক তলাবিশিষ্ট টিনশেড। এ মার্কেটে দুই শতাধিক দোকান রয়েছে। বেশির ভাগ দোকানে রেডিমেড ও গার্মেন্ট আইটেমের পোশাক পাওয়া যায়। মার্কেটের মাঝামাঝি অংশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে (ফাউন্ডেশন ছাড়া) একটি তিনতলা ভবন রয়েছে। এর ২য় তলায় রয়েছে কাউন্সিলর কার্যালয়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১৯৯৬-৯৭ সালেও নান্নু মার্কেটের জায়গাটি পার্কের জায়গা হিসেবে সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। বাচ্চারা খেলাধুলা আর এলাকাবাসী হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করত। এটি ছিল পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটানো ও বিনোদনের স্থান। এরপর ধীরে ধীরে পার্ক দখল করে মার্কেট বানানো হয়। স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রভাব থাকায় তার নামে মার্কেট গড়ে উঠেছে। তারা জানান, পার্কের জায়গা কেউ বরাদ্দ নেয়নি। মার্কেটে ফাউন্ডেশন দিয়ে কোনো ভবন হয়নি। শুধু টিনশেড দিয়ে মার্কেট বানানো হয়েছে। মার্কেট উচ্ছেদ হলেই এলাকাবাসী পার্কের জায়গা ফিরে পাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, এ ব্লকের বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আড়াই কাঠার ১০টি প্লট পার্কের জায়গা হিসেবে বরাদ্দ দেয়। ২০ বছর আগেও জায়গাটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। নব্বই দশকের শেষের দিকে পার্কের জায়গা বিভিন্নভাবে দখল হতে থাকে।

এ ব্লক বাড়ি মালিক কল্যাণ সমিতির এক কার্যকরী সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মার্কেটের জায়গাটি অনেকে হাউজিং থেকে প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিতে চেয়েছে। কিন্তু কেউ বরাদ্দ আনতে পারেনি। কারণ হাউজিংয়ের মানচিত্রে এটি পার্কের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এজন্য এখানে ফাউন্ডেশন দিয়ে কোনো বহুতল ভবনও হয়নি।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা উপবিভাগের এক সার্ভেয়ার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নান্নু মার্কেটের জায়গাটি পার্কের জায়গা। মানচিত্রেও তাই আছে। প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় কয়েকবার চেষ্টা করার পরও পার্কের জায়গা দখলমুক্ত করা যায়নি।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা উপবিভাগ-২) নেজামুল হক মজুমদার বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে দখলে থাকা গৃহায়নের জায়গা অবমুক্ত করছি। এর মধ্যে খেলার মাঠ ও পার্কের জায়গাও রয়েছে। নান্নু মার্কেটের দখলে থাকা গৃহায়নের জায়গার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দখলবাজ, মাদক কারবারি, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সন্ত্রাসী সে যে দলেরই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় পার্কের জায়গা দখল করে মার্কেট বানানো হয়েছে। বিনোদনের স্থান সংকুচিত হয়েছে। বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই। বয়স্ক মানুষ হাঁটবে কোথায়। তিনি বলেন, আমি সব সময় দখলবাজদের বিরুদ্ধে। অচিরেই দখলবাজদের হটিয়ে পার্কের জায়গা উন্মুক্ত করা হবে।

ডিএনসিসির ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রউফ নান্নু বলেন, মার্কেটের এক কোনায় পার্কের জায়গা রয়েছে। কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনাসামনি এসে কথা বলেন তাহলে বিস্তারিত বলব।
সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply