ময়মনসিংহ ব্যুরো
গত ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের পাশে একটি লাল ট্রলিব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় এক পুরুষের দেহের খণ্ডিত অংশ। এরপর দুই দিন পর কুড়িগ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় হাত পা ও মাথা। দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এই ঘটনায়। পুলিশ এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে। বোনকে উত্ত্যক্ত করার জের ধরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানায় পুলিশ।
ঘটনার শুরু
ঘটনার শুরু নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় হুগলা গ্রামে। বখাটে যুবক বকুল উত্ত্যক্ত করে স্থানীয় সাবিনা আক্তার নামে এক নারীকে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে সাবিনাকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার পরিবার। তারপরও পিছু ছাড়েনি বকুল। সাবিনার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে তাকে আবারও উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। বকুলের হাত থেকে নিস্তার পেতে এক পর্যায়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাবিনা ও তার দুই ভাই ফারুক মিয়া এবং হৃদয় মিয়া। সাথে যোগ দেয় ফারুক মিয়ার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার। হত্যার ছক আঁকার পর সাবিনা আক্তার বকুলের সাথে প্রেমের ভান করা শুরু করে। একপর্যায়ে দেখা করার কথা বলে গত ১৯ অক্টোবর তাকে ডেকে আনে গাজীপুরের জয়দেবপুরে ভাইয়ের বাসায়। ভাই ফারুক মিয়া এবং হৃদয় মিয়া সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি করে। সেখানে বকুলকে হত্যা করা হয়। তারপর গার্মেন্টসের কাপড় কাটার ধারালো ব্লেড দিয়ে লাশ ছয় টুকরা করা হয়। হাত, পা ও মাথা ব্যাগে করে মৌসুমি আক্তার তার নিজ বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজার হাটে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসে। সাথে যায় সাবিনাও। আর শরীরের বাকি অংশ একটি ট্রলিব্যাগে করে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের পাশে ফেলে রেখে যায় ফারুক মিয়া এবং হৃদয় মিয়া।
যেভাবে ধরা পরলো
ময়মনসিংহ থেকে শরীর ও কুড়িগ্রামে পাওয়া হাত, পা মাথার সাথে যোগসূত্র রয়েছে কি না প্রথমে তা খতিয়ে দেখা শুরু করে পুলিশ। কাছাকাছি সময়ে উদ্ধার হওয়া সবগুলো লাশের খণ্ড একই পলিথিন ও কালো সুতা দিয়ে পেচানো থাকায় পুলিশের ধারণা হয় ময়মনসিংহ ও কুড়িগ্রামে পাওয়া লাশের অংশগুলো একই ব্যক্তির। এদিকে ময়মনসিংহে ট্রলিব্যাগে রাখা লাশের সাথে উদ্ধার হয় এক নারীর পোশাক। আবার কুড়িগ্রামে খণ্ডিত অংশের সাথে পাওয়া যায় একটি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মহিলাদের ব্যবহৃত হাতব্যাগ। তখন পুলিশ ধারণা করে কোনো নারী সংশ্লিষ্ট ঘটনায় প্রতিশোধমূলক এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। হাতব্যাগের ভিতরে থাকা একটি চিরকুট পায় পুলিশ। সেই চিরকুটের সূত্র ধরে পুলিশ নেত্রকোনার পূর্বধলায় খুঁজে পায় সাবিনা আক্তারের পরিবারকে। এরপর তদন্তে বের হতে থাকে চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা। গত সোমবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় আসামিদের। তাদের দেয়া তথ্যে নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, তিনি ও তার গোয়ন্দা শাখা ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালান। আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে মঙ্গলবার জবানবন্দি দিয়েছে। লাশের পরিচয় গোপন করতে ও পুলিশের হাতে ধরা না পড়তে লাশ টুকরা টুকরা করে আলাদা আলাদা স্থানে ফেলা হয়েছিলো।
Leave a reply