কৃষকদের থেকে ৬ লাখ টন ধান কিনবে সরকার

|

আগামী আমন মৌসুমে ১০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এর মধ্যে ছয় লাখ টন ধান, সাড়ে তিন লাখ টন সিদ্ধ ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে।

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও মিলারদের সহযোগিতায় চাল সংগ্রহ করা হবে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চৌকিদার-দফাদারদেরও আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সভায় কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী। শুধু অর্থমন্ত্রীই নন দেশের খাদ্য পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির আট মন্ত্রীর মধ্যে ছয়জনই অনুপস্থিত ছিলেন।

এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৯ সচিব এ কমিটির সদস্য।

বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, এবার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ নভেম্বরের মধ্যে কৃষকদের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে। এরপর যাচাই করে তা চূড়ান্ত করা হবে। কৃষকের সংখ্যা বেশি হলে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হবে। তবে লটারির মাধ্যমে বাদপড়া কৃষকরা বোরো মৌসুমে অগ্রাধিকার পাবেন।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চাল আরও বেশি পরিমাণ বিতরণ করার উদ্যোগ নেয়া হলে ধানও আরও বেশি পরিমাণ কেনা হবে। পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ বাড়িয়ে সাত মাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাম পুলিশদেরও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। জেলেদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। তাদের সম্মতি পাওয়া গেলে জেলেদেরও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, এ বছর এক কোটি ৫৩ লাখ টনের বেশি আমন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি কেজি আমন ধান উৎপাদনে ২১ টাকা ৫৫ পয়সা খরচ পড়েছে।

তিনি বলেন, চাল ও ধান সংগ্রহ খুবই জটিল প্রক্রিয়া এবং নানা কারণে সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আগে আমন ধান মোটেই কেনা হতো না। এ বছরই প্রথম কেনা হচ্ছে এবং পরিমাণে অনেক বেশি। আমাদের টার্গেট ছিল দেড় লাখ টন, কিন্তু চাষীদের কথা ভেবে পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও প্রশ্ন উঠেছে- প্রকৃত চাষীদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে কি না। আমরা চেষ্টা করছি। এরপরও ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। তালিকায় যারা থাকবে তারা প্রকৃত কৃষক কি না, তা যাচাইয়ে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।

তিনি বলেন, গতবার আমনের উৎপাদন ছিল এক কোটি ৫৩ হাজার টন। আবহাওয়ার কারণে এবার পরিমাণ বেশি হবে। সব চাষীর ধান কিনে পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। কৃষকদের ধান কাটার মেশিন দেয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

ময়েশ্চার মেশিন কেনা হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, চাষীরা ধান নিয়ে গেলে কর্মকর্তারা বলেন- ধানের ময়েশ্চার ঠিক নেই। ময়েশ্চার ১৪ শতাংশ হতে হবে। ময়েশ্চার ১৫ হলে ধান নেয়া হয় না। কৃষকরা ঘরে বসে কেমন করে এসব বুঝবে? এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একটা করে ময়েশ্চার মিটার দেয়া হবে। সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ময়েশ্চার মেপে কৃষকদের সহযোগিতা করবেন। আমনের পুরোটা না পারলে আগামী বোরো মৌসুমে ময়েশ্চার নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় বা কৃষকের যাতে ভোগান্তি না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply