বাবার বিরুদ্ধে তিন সন্তানের সংবাদ সম্মেলন

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরে বাবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিন ভাই-বোন। তাদের অভিযোগ এই নির্যাতনে সহযোগিতা করছে মাগুরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোন তাসনিম ফারজানা। উপস্থিত ছিলেন তার দুই ভাই বরকত আল আজাদ ও রহমত আল আজাদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তাদের বাবা সিকদার আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক পরিচালক। ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট তাদের মা মাহমুদা বেগম মারা যান। মৃত্যুকালীন সময়ে তার মা নানা বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুরে অনেক সহায় সম্পত্তি রেখে গেছেন বর্তমানে ওই সম্পত্তির মালিক তারা তিন ভাই বোন।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, তাদের নামে মায়ের সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের বাবা নানা ভাবে তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। এ চক্রান্তের ধারবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর তাদের বাবা জরুরি আলোচনার কথা বলে দুই ভাইকে কোর্ট চাঁদপুরে ডেকে আনেন। পরে মাগুরার গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় দুই ভাইকে আটকে রাখা হয় মাগুরার হাজিপুর পুলিশ ফাঁড়িতে। পরে গত ১৮ অক্টোবর তারা মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও মাগুরা ডিবি পুলিশের সহায়তায় ফরিদপুর শহরের আলীপুরে রওশন খাঁ সড়কে অবস্থিত লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রেখে যান।

তিনি বলেন, তার বাবা ও মাগুরার পুলিশ সুপার ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। পুলিশ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার সময় বলেছিল তারা হত্যা মামলার আসামি। মামলা হয়েছে আলফাডাঙ্গা থানায়। পরে মাগুরার পুলিশ সুপার তাকে বলেন, মাগুরার শ্রীপুর থানায় তাদের নামে মামলা রয়েছে মাদকের। তিনি বলেন, তিনি শ্রীপুর থানায় গিয়ে যোগাযোগ করলে শ্রীপুর থানার ওসি জানায় ওই থানায় ওই দুই ভায়ের নামে কোন মামলা নেই।

তাসনিম ফারজানা বলেন, তিনি তার দুই ভায়ের সন্ধান না পেয়ে ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট একটি রুলনিশি জারি করেন।

তিনি বলেন, হাইকোর্টের রুলজারির কথা শুনে তার বাবা দুই ছেলেকে তার জিম্মায় নেওয়ার জন্য মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু তার দুই ভাই যেতে অস্বীকার করলে ডিবি পুলিশের সহায়তায় বাবা তার দুই ভাইকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন নিরাময় কেন্দ্র হতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে তার বাবাসহ মাগুরার ডিবি পুলিশ সদস্যরা চলে যায়।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে কোতয়ালী থানার পুলিশ ওই নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে মাগুরার ডিবি পুলিশকে দেখতে পান। তারা জানায় তারা সার্চ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে ওই দুই ভাইকে নিতে এসেছেন এবং এ বিষয়টি দুই জেলার পুলিশ সুপার অবগত।

এসআই বেলাল বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম যে এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রুল রয়েছে তখন আমি মাগুরার ডিবি পুলিশদের বলি এ অবস্থায় দুই ভাইকে এ কেন্দ্র থেকে নেওয়া যাবে না।

মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই দুই ভাই মাদকসেবী। তাদের নামে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা হয়। এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওদের বাবা অনুরোধে তাদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য মাগুরার ডিবি পুলিশ তাদের ফরিদপুর নিয়ে যায়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply