নুসরাতের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ায় ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছরের কারাদণ্ড

|

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাথে আরও ১৫ লাখ টাকার জরিমানাও করা হয়েছে তাকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম রায় এটি।

এরআগে ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেন রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার তারিখ নির্ধারণ করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেমকে এজলাসে আনা হয়।

এর আগে, ১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওইদিন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।

১৬ জুন শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন মোয়াজ্জেম হোসেন। ১৭ জুন ওসি মোয়াজ্জেম জামিন আবেদন করলে নাকচ করেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ২০ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হলে বিচারক গত ২৪ জুন তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন) সব সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেন। পরে তিনি ২ জুলাই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। সেখানেও তার জামিন নাকচ হয়।

প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়।

যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।

এরপর ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার চলাকালে নুসরাতকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে গায়ে আগুন দেয় নরপশুরা। ওই দিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।

২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। আসামিদের বেশিরভাগই এখন কারাগারে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply