ফরিদপুর মেডিকেল: পর্দা কেলেঙ্কারির পর এবার বৃক্ষরোপণে অনিয়মের অভিযোগ

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারির পর এবার বৃক্ষরোপণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন বৃক্ষরোপণে ২০ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল ও মেডিকেল চত্বরে নামকাওয়াস্তে কিছু ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে বৃক্ষরোপণের জন্য ২০ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বৃক্ষরোপণ প্রকল্পটি গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার ঢাকার তত্ত্বাবধায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। নামমাত্র কাজ শেষে সিকিউরিটি মানি রেখে ঠিকাদারকে ১৭ লাখ ২ হাজার ৩শ ১৯ টাকার বিল প্রদান করা হয়।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মধ্যে ছিল গাছ লাগানোর উপযোগী মাটি সরবরাহ, সার সংগ্রহ ও রোপন স্থানে প্রয়োগ, গাছের চারা ক্রয়, ঘাস কাটার মেশিনসহ যন্ত্রাংশ ক্রয়। ওই সময় প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা.আবুল কালাম আজাদ।

বুধবার সরেজমিনে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কিছু ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে। এছাড়া ১শ ৮৬টি কদম, কৃষ্ণচূড়া, নারিকলসহ ফলের চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে কিছু যন্ত্রাংশ কেনার কথা থাকলেও তা চোখে পড়েনি। নামমাত্র কিছু গাছের চারা লাগিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত সিংহভাগ অর্থই লোপাট করা হয়েছে।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পাল বলেন, আমি বর্তমানে রাজবাড়ী জেলাতে কর্মরত রয়েছি। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি ফরিদপুরের। কাজটি ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারাই দেখভাল করেছেন। ফরিদপুর অফিস এই কাজের বিষয়টি দেখভাল করেনি। ফরিদপুর থেকে শুধুমাত্র কাজের বিল প্রদান করা হয়েছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম খবিরুল ইসলাম বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক যিনি ছিলেন বিষয়টি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, আমি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৮ সালের এপ্রিলে যোগদান করেছি। গাছের চারা লাগানোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওই প্রকল্পের পরিচালক আমি ছিলাম না। তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ সাহেব।

গাছের চারা লাগানো প্রকল্পটির পরিচালক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী নওয়াব আলী বলেন, ঢাকা থেকেই ঠিকাদার এসেছিল, তারাই কাজ করেছে। দেখভালও করেছে ঢাকার কর্মকর্তারা। ঢাকা থেকেই প্রকল্পের ফান্ড এসেছে ফরিদপুরে। তাদের নির্দেশেই বিল প্রদান করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার।

গাছের চারা রোপণ প্রকল্প চলাকালীন সময়ে ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন মানিক লাল সরকার। বর্তমানে তিনি যশোর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি জানান, গাছের চারা রোপণ প্রকল্পটি সরাসরি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার এর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়। তারাই প্রকল্পটি তদারকি করেছে। শুধুমাত্র কাজের বিল ফরিদপুর অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে।

মানিক লাল সরকার আরো জানান, গাছের চারা রোপন প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ২০ লক্ষ ২ হাজার টাকা। সিকিউরিটি মানি রেখে ১৭ লক্ষ ২ হাজার ৩শ ১৯ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়। কাজের বিলটি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচারের প্রধান বৃক্ষ পালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই-খোদার নির্দেশক্রমে ফরিদপুর থেকে বিল প্রদান করা হয়।

ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচারের প্রধান বৃক্ষ পালনবিদ শেখ মোঃ কুদরত-ই-খোদার সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহুল আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারিসহ সরঞ্জামাদি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। আলোচিত পর্দা কেলেঙ্কারিসহ সরঞ্জামাদি ক্রয়ে দুর্নীতি ও ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, মেডিকেল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হাসপাতালের একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও সাবেক প্যাথলজিস্টকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে এ মামলা করা হয়। মামলার বাদী হয়েছেন দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply