ঝুঁকিপূর্ণ ১৩৩৪টি ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম, যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

|

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সারা দেশে ১৩৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের নির্মিত বড় হাসপাতাল ভবন ৬০টি এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর নির্মিত ভবন ১২৭৪টি।

দ্রুত এসব ভবন সংস্কার করা না হলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বা তদূর্ধ শয্যা বিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ভবনের সংখ্যা ৬০টি। যেগুলো নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদফতরের। ৫০ শয্যার নিচের শয্যার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ১২৭৪টি। সারা দেশে মেরামত যোগ্য ভবনের সংখ্যা দুই হাজার ৬২৯টি। ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণযোগ্য ভবনের সংখ্যা ৬৩৩টি এবং নতুন নির্মিত ভবন চালুর অপেক্ষায় রয়েছে ১৬২টি।

মাঠপর্যায় থেকে প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা না হলেও ওই ভবনগুলো ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত ও নিরাপদ নয়।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের অধিকাংশ ভবন ১৯৫৫ সালে নির্মিত। কিছু ভবন ১৯১৮ হতে ১৯৪২ সালের মধ্যে নির্মিত। ফলে এসব ভবন ব্যবহার করা অনিরাপদ। কিং এডওয়ার্ড ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা সত্ত্বেও বর্তমানে সেখানে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

একই ভাবে মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, নিপসম, আইইডিসিআর এবং নিপসম কোয়ার্টারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের বয়স ৬০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। যা ব্যবহার করা মোটেই নিরাপদ নয়।

এছাড়া টঙ্গীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, শেরপুর জেলায় বিদ্যমান অনেক স্বাস্থ্য স্থাপনা জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী। এসব ভবনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

এছাড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ৫০ শয্যা, ৩১ শয্যা, ২০ শয্যা, ১০ শয্যা, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক, ডরমেটরি, নার্স কোয়ার্টার, ডক্টরস কোয়ার্টার, কিচেন ইত্যাদির মধ্যে ১২৭৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ২ হাজার ৫৮৩টি মেরামতযোগ্য ভবনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়া ৫৩৬টি ভবন ভার্টিকেল এক্সটেনশন বা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণযোগ্য বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এসব ভবন ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে নির্মিত আরও ১১৭টি নতুন ভবন চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে উন্নত, আধুনিক ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুপরিসর ভবন ও অবকাঠামো প্রয়োজন।

সে নিরিখে দেশব্যাপী স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান/হাসপাতালগুলোর মধ্য হতে ঝুঁকিপূর্ণ, মেরামতযোগ্য, চাহিদা অনুযায়ী ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণযোগ্য ভবনগুলো চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে নতুন আধুনিক ভবন নির্মাণ, প্রয়োজনীয় মেরামত ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ চলতি বছরের ৩০ জুন অতিরিক্ত সচিবকে (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ৩ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত তালিকাসহ প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়। সেই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কমিটি তালিকাসহ প্রতিবেদন দেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রণীত তালিকার ওপর ভিত্তি করে গণপূর্ত ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ক্যাটাগরি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর একটি আধুনিক ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হতে পারে। যাতে স্বাস্থ্য সেবার চাহিদার ভিত্তিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মাণ ও মেরামত কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহজ হয়।

তালিকা প্রণয়ন কমিটি বেশকিছু সুপারিশ প্রদান করেছে। যেমন গণপূর্ত অধিদফতর ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়ন করা। রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতাদের নিরাপত্তা এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের হালনাগাদ তালিকা প্রণয়ন করা। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মেরামত কাজের গুণগত মান ও উৎকর্ষতা বজায় রাখতে জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে প্যাকেজ পদ্ধতিতে প্রসিদ্ধ ঠিকাদারদের মাধ্যমে মেরামত কাজ পরিচালনা করা।

সরকরি নির্দেশনা অনুযায়ী ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে নির্মিতব্য ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ শুরুর দিন থেকে নির্মাণ কাজ এবং জনবল ও সরঞ্জামাদি সংস্থানের কার্যক্রম সমান্তরালভাবে পরিচালনা করা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, একটি প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন স্তরের অনেক স্বাস্থ্যসেবা ভবন পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন আমরা বাজেটের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি একটি বা দুটি অর্থবছরের বাজেটের মাধ্যমে এগুলো সংস্কার করা যায় তাহলে সেভাবে করা হবে। অন্যথায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য নতুন ৫ হাজার শয্যার প্রকল্প গৃহীত হয়েছে তাই ওটা নিয়ে এখন ভাবছি না।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply