ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি পদত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নুরুল হক নুর।
রোববার ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীর সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান ভিপি নুর।
এর আগে ডাকসুর সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেন জিএস গোলাম রাব্বানী।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডাকসু চত্বরে ভিপি নুরুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ আনলে কিছুই হবে না। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ৯ মাস কাজ করতে পারিনি বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক আছে। কারণ প্রত্যেকটি কাজে ছাত্রলীগ বাধার সৃষ্টি করেছে।
দুটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে নুর বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা হলো– হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে। হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রদের জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নেয়া হচ্ছে। একপ্রকার অলিখিত দাসত্ব কায়েম করে রেখেছে ছাত্রলীগ।
ডাকসু ভিপি বলেন, আমরা যখন হল থেকে অছাত্র-বহিরাগত বিতাড়ন শুরু করলাম, তখন প্রথম এসএম হলে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই হামলার বিচার পর্যন্ত করেনি। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত থাকায় বিচার করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিজয় একাত্তর হলে গণরুমের ছাত্রদের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেছে, গালিগালাজ করেছে। পরে সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।
ভিপি নুর বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের যে ২৩ জন নির্বাচিত হয়েছে, তারা কখনও সাধারণ ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেনি। কখনও হলের সিট সমস্যা নিয়ে কথা বলেনি। আমিই প্রথম সিট সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার মেয়েদের হলে সাইবার সিকিউরিট অ্যাওয়ার্নেস প্রোগ্রাম করতে চেয়েছিল। সরকারি সংস্থা ৯৯৯-কে নিয়ে প্রোগ্রামটি করার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ সেই ৯৯৯-কে ফোন করে আসতে নিষেধ করেছে।
ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী প্রসঙ্গে নুর বলেন, তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট চাঁদাবাজি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও মাদকাসক্তির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে তাকে পদচ্যুত করা হয়েছে। তিনি (রাব্বানী) বলেছেন– ডাকসুতে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে, আমি এক টাকাও খরচ করিনি।
জবাবে ডাকসু ভিপি বলেন, আমাকে নামেমাত্র ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক টাকাও হাতে পাইনি। আমি ছোট ছোট তিনটি বাজেট করেছিলাম।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য দেখিয়েছে, সেই ছাত্রীকে একটি রেসিং সাইকেল দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ট্যুরের জন্য ১০ হাজার টাকা, সুফিয়া কামাল হলের মেয়েদের র্যা গ ডে’র জন্য ১০ হাজার টাকা সুপারিশ করেছিলাম। সেই টাকাটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও পর্যন্ত দেয়নি। এই টাকাটা ভিপির বাজেট থেকে যাবে। কিন্তু তারা ভিপিকে কাজ করতে দিচ্ছে না।
শুধু ছাত্রলীগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকেও দ্বিমুখী আচরণের শিকার হয়েছি বলে জানান ভিপি নুর।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা সবসময় ডাকসুকে ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চেয়েছে। নুর বলেন, ডাকসুর প্রোগামের ব্যানারে ভিপির নাম থাকে না গেস্ট হিসেবে। সেখানে নাম থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতির, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতির।
নুর আরও বলেন, ডাকসুর প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের লোকের বাইরে এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে আনা হয়নি। তারা শুরু থেকে এই ডাকসুকে ডাকসু লীগ বানাতে চেয়েছে।
ডাকসুতে ছাত্রলীগের যে ২৩ নেতাকর্মী রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে নুর বলেন, এর মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধেই জালিয়াতি করে ভর্তির অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়ে ডাকসু জিএস লজ্জায় এতদিন ডাকসুতে আসেননি। রাতের অন্ধকারে দু-একদিন এসেছেন। আজ এসেছে। তারা ভেবেছে ভিপিকে ঠেকাতে ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্রলীগের মধ্যে তো বিভেদ রাখা যাবে না। তখন তারা ঘর থেকে জিএসকেও নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
ভিপি নুর বলেন, আমরা এখনও স্পষ্ট করে বলছি- কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে ডাকসু ভিপি বিন্দুমাত্র অনৈতিক লেনদেন করেছে, অবৈধ লেনদেন করেছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছে- তাদের এই প্রশ্ন তোলার আগেই প্রমাণটা গণমাধ্যমে উপস্থাপন করলেই ডাকসু ভিপি পদত্যাগ করবে। ছাত্রলীগের কথায় ডাকসু ভিপি পদত্যাগ করবে না বা ছাত্রলীগের কথা কর্ণপাত করবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে সারা দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েমের জন্য ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে দেশকে একটা নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ডাকসুতেও তারা দখলদারি পরিবেশ কায়েম করতে চায়। তারা চায় ডাকসুতে ছাত্রলীগের বাইরে যেন কেউ না থাকে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ডাকসুর ভিপি পদটি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। কারণ সারা দেশে ছাত্রলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন কথা বলে না। একমাত্র ভিপির নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। এর একটা প্রভাব সারা দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে রয়েছে।
Leave a reply