মিয়ানমারকে সাজা দিতে পারবে আইসিজে?

|

রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আইসিজেতে মামলা মিয়ানমারকে এই প্রথম বৈশ্বিক পরিসরে চাপে ফেলেছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা আর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্তে গণহত্যার দায় যে মিয়ানমারের এড়ানোর সুযোগ নেই, সেটা স্পষ্ট। মিয়ানমারের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির উপস্থিতিতে ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এ শুনানি শেষে আগামীকাল শুক্রবার এ বিষয়ে রায় দিতে পারে আদালত। এ আদালতের যে কোনো রায়ই চূড়ান্ত, বাধ্যবাধকতাপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয়। চূড়ান্ত রায়ের পর আপিলের কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যায় আইসিজে মিয়ানমারকে সাজা দিতে পারে কিনা। উত্তর হচ্ছে, না। আইসিজের ওয়েবসাইটেই স্পষ্ট করে লেখা আছে, এটা কোনো অপরাধ আদালত নয় এবং কারও শাস্তি নিশ্চিত এখতিয়ারও তাদের নেই। তবে অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা জারির ক্ষেত্রে আদালতের রায়ই চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে আপিলের কোনো সুযোগ নেই। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইসিজের কাজ হচ্ছে প্রধানত দুটি। এক. দুটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে আইনগত বিরোধ (লিগ্যাল ডিসপুট) মীমাংসা। দুই. কোনো আইনি প্রশ্নে পরামর্শমূলক মতামত প্রদান। ফলে এতটুকু সামর্থ্য নিয়ে আইসিজে মিয়ানমারের কতটুকু বিচার করতে পারবে এখন সেটাই দেখার বিষয়। তবে গাম্বিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্তর্র্বর্তী যেসব আদেশ দিতে পারে তা হল- রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়া, নাগরিকত্ব দেয়া, বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন, মানবাধিকারকর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যে কোনো আদেশ দিতে পারে বিচারিক আদালত। দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) রোহিঙ্গাদের গণহত্যা নিয়ে আরেকটি মামলা চলছে। আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আর্জেন্টিনার একটি আদালতেও রোহিঙ্গা গণহত্যায় সু চির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানি শেষে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অংশ হিসেবে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। তবে মিয়ানমার সরকারের প্রধান হিসেবে সু চিকে দায়মুক্তি দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো নির্দেশনা জারি হলে সেটার একটা সুস্পষ্ট প্রভাব থাকবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আইসিজে মিয়ানমারের বিপক্ষে রায় দেয়, তবে এতে দেশটির আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের অন্যান্য সংগঠন বা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপরও একটি বাড়তি চাপ তৈরি হবে। গাম্বিয়ার যুক্তি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের নামে মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড বা জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। দেশটি চাইছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে জরুরিভিত্তিতে কিছু অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা জারি করুক। আপিলে বলা হয়েছে, মিয়ানমার যে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করে আসছে, সেটি যেন আইসিজে রায়ে ঘোষণা করে এবং একটি উপযুক্ত ট্রাইব্যুনালে তার শাস্তি নিশ্চিত করে। একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন, নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব প্রদানসহ সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করে নির্দেশনা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আদালত যদি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে নির্দেশনা জারি, সেটি সরাসরি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চলে যাবে। তখন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত হবে গুরুত্বপূর্ণ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply