পাগলাটে ট্রাম্প পিছু হটেছেন?

|

কখনও গরম তো, কখনও নরম। কিন্তু বরাবরই পাগলাটে। বলা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা। ক’দিন আগে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কথা উচ্চারণ করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন ইরানের সাথে কোনো বিবাদে যেতে চান না। পরদিনই মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হলো ইরানের শ্যাডো কমান্ডার খ্যাত কাসেম সোলাইমানী। এরপরও যেন হুংকারে গর্জে উঠতে থাকলেন ট্রাম্প। কোনো রাখঢাক ছাড়াই বলতে থাকলেন, ‘সন্ত্রাসী’ সোলাইমানীকে হত্যা করে বেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র!

সোলাইমানী হত্যাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও পেন্টাগন সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে পার্লামেন্টে বিল পাশ করে তারা। বুধবার ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। কঠোর জবাব দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এর প্রতিক্রিয়া ট্রাম্প কীভাবে দেখাবেন সেটি নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। টুইটারে বাঁকা সুরে কথা বললেও প্রেস ব্রিফিংয়ে যেন হঠাৎ সুর নরম করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট! গত ক’দিন পাল্টাপাল্টি হুমকি ধামকি দিলেও এবার ইরানের পাল্টা হামলার বদলা নেয়ার কোনো হুমকি তো দেননি, বরং শান্তি স্থাপনে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসময়, তিনি ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো সৈন্য মারা যায়নি বলে জানিয়েছেন। তবে ওই হামলায় সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। যদিও ইরানে দাবি অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় তাহলে শান্তি স্থাপনে তিনি প্রস্তুত। ইরান নতুন কোনো হামলা চালানোর সম্ভাবনা নাকচ করায় সেটিকে ‘ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তারা যে ক্ষান্ত দিয়েছে সেটা সবার জন্যই মঙ্গল।

সাংবাদিকদের সামনে সংক্ষিপ্ত বিবৃতির শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, তিনি যতদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকবেন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেবেন না। ইরানের বিরুদ্ধে তিনি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেবেন, এটি ততদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে যতদিন ইরান তার আচরণ না বদলাবে। তবে এ ব্যাপারে তিনি কিছু ভেঙে বলেননি।

সংযত ট্রাম্প বলেন, ইরান একটি মহান দেশ হতে পারে, সে যোগ্যতা তাদের রয়েছে। আমাদের সবার এখন উচিৎ ইরানের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির চেষ্টা করা যাতে করে বিশ্ব নিরাপত্তা বাড়ে।

ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের যে দাবি ইরাকের পার্লামেন্ট করেছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। তবে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেলের কোনো প্রয়োজন আমেরিকার নেই।

মধ্যপ্রাচ্যে অধিকতর ভূমিকা নেয়ার জন্য নেটো জোটকে বলবেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাগলাটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঝামেলা বাঁধাবেন এটাই অনুমিত ছিল। দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত ইরানের সাথে অশান্তি তৈরি করলেন তিনি। তবে কঠিন সময়ে। হিসাবে গরমিল হলে গদি নিয়েও টানাটানি পড়তে পারে ট্রাম্পের।

তাদের মতে, নেতৃত্ব ব্যর্থতার কারণে কঠিন সময় পার করছেন ট্রাম্প। সুষ্ঠু বিবেচনাবোধ ঘাটতি আছে তার এবং প্রতিপক্ষের সামর্থ্য সম্পর্কেও তার ধারণা দুর্বল। তিনি কখন কী করবেন বা করতে পারেন, সেই সম্পর্কে অনুমান করা তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষেও সম্ভব নয়। এমন খামখেয়ালি ব্যক্তি যখন পরমাণু হামলার নির্দেশ দেওয়ার মতো চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হন সেটি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই ভয়ঙ্কর।

তবে, ট্রাম্পের নরম সুর কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে সেটি নিয়েও বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। সবচেয়ে জোরালো ধারণা, ইরানের কঠিন জবাবে ট্রাম্পের হিসেবে গরমিল দেখা দিয়েছে। চারপাশ থেকেই চাপে পড়েছেন তিনি। তাই খানিকটা ডিপ্লোমেটিকভাবে আগাতে বাধ্য হচ্ছেন খামখেয়ালি ট্রাম্প। যেকোনো সময় আবার উগ্র হয়ে উঠতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে, হিসেবে ভুল হলে এর চড়া মূল্যই দিতে হতে পারে অভিশংসের চাপে থাকা এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply