পাল্টে গেল দৃশ্যপট: তেহরানের রাজপথে হাজারো মানুষ, আয়াতুল্লাহ-রুহানির বিরুদ্ধে স্লোগান

|

মাত্র দুটি দিনের ব্যবধান। গত বৃহস্পতিবারও তেহরানের রাজপথে ছিলেন হাজারো মানুষ। তারা সবাই দেশটির সরকার আর সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের অনেকের হাতে ছিলো মৃত জেনারেল সোলাইমানির ছবি। সোলাইমানিকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক পদক্ষেপের সমর্থনে মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন।

কিন্তু দুদিনের মধ্যে দৃশ্যপটে হঠাৎ আমুল পরিবর্তন। শনিবার তেহরানের রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। কিন্তু তারা সবাই স্লোগান দিয়েছেন রুহানি সরকারের বিরুদ্ধে। এমনকি অনেকের মুখে শোনা গেছে আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে স্লোগানও; যা ইরানের রাজপথে প্রকাশ্যে ঘটা অনেকটা অকল্পনীয়।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা আয়াতুল্লাহ পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা সরকারকে ‘মিথ্যুক’ অভিহিত করে ‘মিথ্যুকদের মৃত্যু হোক, ‘স্বৈরাচারের মৃত্যু হোক’ বলেও স্লোগান দিয়েছেন। ‘তোমাদের কোনো লজ্জা নেই’ বলেও স্লোগান শোনা গেছে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিক্ষোভের ভিডিওতে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চলা ইরানি মিডিয়া এই বিক্ষোভের বিষয়ে নীরবতা পালন করছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে শনিবারের বিক্ষোভের।

যুক্তরাষ্ট্রে ইরাকি ঘাঁটিতে মিসাইল নিক্ষেপ করতে গিয়ে ইরানি সেনাবাহিনী ‘ভুল করে’ তেহরান বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করা একটি যাত্রীবাহী বিমানকে আঘাত করে। এতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৩ জন যাত্রী ও ক্রু মারা যান। ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের বিমান হলেও সেটির যাত্রীদের প্রায় সবাই হয়তো ইরানি নাগরিক অথবা ইরানি বংশোদ্ভুত পশ্চিমা কোনো দেশের নাগরিক। তাদের অনেকে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা ও চাকরি করছিলেন।

নিহতদের সবারই স্বজন ইরানে রয়েছেন। এমন একটি ঘটনা ঘটানোর পরও ইরানি কর্তৃপক্ষ তিনদিন ধরে দায় অস্বীকার করে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে আসছিল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে শনিবার শেষ পর্যন্ত ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ স্বীকার করেন যে, ভুল করে ইরানি সেনাবাহিনী বিমানটি ভূপাতিত করেছিল। শনিবার আয়াতুল্লাহ খামেনিও নিহতদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেন।

দীর্ঘ সময় ধরে দেশ ও বিশ্ববাসীকে মিথ্যা বলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করে সমালোচিত হচ্ছে ইরানের সরকার। তারই জেরে ক্ষুব্ধ ইরানি আজ বিক্ষোভে নামেন।

গত কয়েক মাস ধরে ইরানে অব্যাহতভাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিলো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে এক সপ্তাহে ৩০০ এর বেশি বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। কয়েক মাসের বিক্ষোভে অন্তত ১৫০০ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে চলছিলো বিশেষ করে তরুণদের এই বিক্ষোভ। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন মাত্রায় উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়ায় বিক্ষোভ থেমে যায় এবং মার্কিন বিরোধী মনোভাব মানুষের মধ্যে বেড়ে যাওয়ায় তারা সরকারের পক্ষে স্লোগান দিয়েছিলেন জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ। কিন্তু বিমান বিধ্বস্ত করার ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা ও মিথ্যাচারে ক্ষুব্ধ মানুষ আবারও রাস্তায় নামলেন সরকারের বিরোধিতা করে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply