মুজিববর্ষে প্রথম মৃতদেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ

|

সচেতনতার অভাব এবং মানুষের অনাগ্রহের কারণে বাংলাদেশে এখনও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। ফলে এখনও মৃত্যুর পরে দান করা শরীর থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় না।

তবে সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন এ বছর পুনরায় এ বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার এই উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানানো হয়। ‘মরণোত্তর অঙ্গদান ও সংযোজন’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন ও ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। অথচ মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগের চিকিৎসা পায়। বাকি ৮০ ভাগ মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরেই রয়ে যাচ্ছেন। উন্নত বিশ্বে ৬০ ভাগ মানুষ মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন। যদিও ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে কিডনি সংযোজন ও ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে। দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অপ্রতুল জীবিত কিডনি বা দাতার (ডোনার) অভাবে রোগীরা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারছেন না।

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দেশ সৌদি আরব ও ইরানে মরণোত্তর কিডনিদানের অসংখ্য উদাহরণ আছে। বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর থেকে সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন মরণোত্তর কিডনি দানের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কিন্তু মানুষের সচেতনতা ও অনাগ্রহের কারণে সেটি ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। এ বছরও সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন পুনরায় এ বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়; যদিও অনেক দেরিতে এটি শুরু হচ্ছে। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সচেতনতা তৈরির কাজ করতে পারেন। এ জন্য সবার প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা দরকার। মরণোত্তর দেহদানবিষয়ক আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএসএমএমইউর সহ-উপাচার্য রফিকুল আলম বলেন, আমরা এতদিন জীবিত মানুষ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করে আসছি। এখন মৃতদেহ থেকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছি। উন্নত বিশ্বে ৯০ ভাগ কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে। মৃতদেহ থেকে অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য মরণোত্তর দেহদানবিষয়ক আইনের আলোকে ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কিছু প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে, যাতে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ে।

সংবাদ সম্মেলনে মরণোত্তর অঙ্গদান ও সংযোজন বিষয়ে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হারুন আর রশিদ বলেন, একটি মৃতদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। মৃতদেহের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, মূত্রগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও খাদ্যনালির নিম্নাংশ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মৃতদেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এখনও শুরু হয়নি। ধর্মীয় দিক চিন্তা করে মানুষ এটা করে না। কিন্তু এ জন্য সচেতনতা দরকার। এটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। যারা মরণোত্তর অঙ্গদান করবেন, তাদের উচ্চ মর্যাদায় স্থান দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সালাম, যুক্তরাষ্ট্রেও ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বিএসএমএমইউর অধ্যাপক এ কে এম আক্তারুজ্জামান, অধ্যাপক এ কে এম খুরশিদুল আলম প্রমুখ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply