পিইসি-জেএসসি সমমান পরীক্ষার ফলাফলে উত্থান-পতন

|


তোয়াহা ফারুক

ভারতবর্ষে পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ব্রিটিশদের উদ্যোগে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা বিদায় নেয়ার পরও মোটামুটি অপরিবর্তিত থেকে গেছে এ পরীক্ষা পদ্ধতি। কিছুদিন আগ পর্যন্তও ব্রিটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত রীতি অনুসারে ১০ বছরের স্কুল পাঠক্রম শেষ করার পর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা এস.এস.সি নামে প্রথম পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতো এদেশের শিক্ষার্থীরা।

২০০৯ সালে প্রবর্তিত নতুন শিক্ষানীতির আওতায় পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণশেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নামে একটি নতুন পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয় যা বর্তমানে পিইসি নামে পরিচিত। পরের বছর থেকে চালু হয় ৮ বছরের নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাশেষে জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা জেএসসি। পিইসি ও জেএসসির পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের জন্য চালু হয় সমমানের ইবতেদায়ী সমাপনী ও জেডিসি পরীক্ষা। গত তিন বছরের পিইসি-জেএসসি সমমানের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে উল্লেখযোগ্য উত্থান-পতন ধরা পড়েছে।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ জন। আর বহুল কাঙ্ক্ষিত জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন। তবে, এবার সারাদেশের স্কুলগুলোতে পিইসি পরীক্ষার ফলাফলে পাশের হার কমেছে। কমেছে জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তর সংখ্যাও।

২০১৬ সালের প্রাথমিক সমাপনীতে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন এবং ইবতেদায়ী সমাপনীতে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭১৫ জন অর্থাৎ মোট ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাশের হার ছিল ৯৮.৫১ ভাগ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮

তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৩৮ জন এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীতে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে, প্রাথমিকে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ আর ইবতেদায়ীতে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯৫ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রাথমিকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন এবং ইবতেদায়ীতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে পাশের হার ও জিপিএ ফাইভের সংখ্যা বাড়লেও ২০১৭ সালে এসে হঠাৎই সেটি কমে গেছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, এর কারণ খতিয়ে দেখা হবে। গবেষণা না করে কারণ বোঝা কঠিন।

একই সময়ে প্রকাশ হওয়া, জেএসসি-জেডিসি’র ফলাফলে এবার (২০১৭ সালে) সম্মিলিতভাবে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে; তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন। গতবার অর্থাৎ ২০১৬ সালে সম্মিলিত জিপিএ ফাইভের সংখ্যা ছিল ২,৪৭,৫৮৮ আর পাশের হার ছিল ৯৩.০৬ শতাংশ।

২০১৫ সালে জেএসসি-জেডিসি’তে পাসের হার যথাক্রমে ৯২ দশমিক ৩১ এবং ৯২ দশমিক ২১ শতাংশ। ২২ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৮২ জন। সারাদেশে জেএসসি ও জেডিসিতে মোট জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ জন।

অর্থাৎ জেএসসি-জেডিসি’র ক্ষেত্রেও ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের ফলাফলে পাশের হার ও জিপিএ ফাইভের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে সেটি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে অবশ্য কোনো ধরনের অস্বাভাবিকত্ব দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এখনই ফলাফল মূল্যায়ন করতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা বোর্ড আলাদাভাবে মূল্যায়ন করুক। তখন, কোনো কারণ থাকলে তা বেরিয়ে আসবে।’ তবে, সার্বিকভাবে শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ঢালাওভাবে জিপিএ ফাইভ প্রদান নিয়েও আছে বিতর্ক। প্রাথমিক থেকে এইচএসসি পর্যন্ত জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পরবর্তীতে আশানুরূপ ফল করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থী পাশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান যমুনা নিউকে বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নানা সময়ই বিতর্ক ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা এর সাথে নিজেদের সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষার মান ও অবকাঠামোর ওপর জোর দেয়া উচিত। তবে, অধিক জিপিএ ফাইভ শিক্ষার উচ্চমানের নির্দেশক এমনটি মনে করেন না তিনি।

যমুনা অনলাইন: টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply