টিআইবির অভিযোগ অনুমানভিত্তিক বললেন গণপূর্তমন্ত্রী

|

রাজউক এবং দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে বলে উল্লে­খ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, রাজউক থেকে বিনা ঘুষে সাধারণ মানুষ সেবা পেয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল। রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতাদের একাংশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে ঘুষ নেয়া হয়।

বুধবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজউক জনবান্ধব না হয়ে একটি মুনাফা অর্জনকারী ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ উভয় ক্ষমতায়ই রাজউকের হাতে দেয়ায় ব্যবসার স্বার্থে উন্নয়ন কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণ কাজ হচ্ছে না। সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে শহরের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের কাজ রাজউক থেকে সরিয়ে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। এ জন্য সরকারকে আইন সংশোধনসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ১৫৮ বার সংশোধন করে রেকর্ড গড়েছে রাজউক। এর মধ্যে জলাধার ভরাট সংক্রান্ত ৩৪টি, কৃষি ও গ্রামীণ বসতি বাতিল করে ২০টি, বন্যাপ্রবাহ এলাকা ভরাট করে ১৪টি এবং অপরিবর্তনশীল ভূমি ভরাট করে ১৩টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র, নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন পর্যায়ে একজন ব্যক্তিকে দুই হাজার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং আবাসন প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া প্রকল্প সম্পর্কিত সেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি’র হারের চেয়ে ২ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দিতে হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজউকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উদাসীনতা রয়েছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী, রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের তথ্য জমা দেয়া কিংবা প্রকাশ করা হয় না। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও যথাযথভাবে শাস্তির প্রয়োগ হয় না। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রাজউক বা এ সংক্রান্ত অন্যান্য দফতরের নিয়ন্ত্রণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার দায়িত্ব থাকলেও তারা যথাযথভাবে সেটা করছেন না। ওই কমিটির দু’জন সদস্যের ব্যক্তিগত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যা স্পষ্টভাবেই স্বার্থের সংঘাত। এর বাইরে রাজউকের তদারকির দুর্বলতায় ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও প্রকল্প অনুমোদন না নিয়েই বোয়ালিয়া খালের অংশ বিশেষ দখল করে অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি এবং খিলগাঁও পার্কের তিন বিঘা জায়গা দখল করে আনসার ভিডিপি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগকারী সেবাগ্রহীতারা পুনরায় রাজউকে সেবার জন্য গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেবা প্রদানে অস্বীকৃতি এবং অশোভন আচরণ করেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে রাজউক বিষয়ে দুদকের গণশুনানিতে ৩৩টি অভিযোগ আসে। টিআইবি ১১ জন গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে জানতে পেরেছে- বেঁধে দেয়া সময়ের চেয়ে দুই বছর বেশি অতিবাহিত হলেও ৯টির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিবেচনায় ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করে না। রাজউক নির্ধারিত ফ্ল্যাটের মূল্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ধার্যকৃত মূল্যের প্রায় সমান। যেমন : উত্তরা এলাকায় রাজউকের প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। বেসরকারি রিয়েল এস্টেটের প্রতি বর্গফুট ধার্যকৃত মূল্য ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা। লালমাটিয়ায় রাজউকের ধার্যকৃত মূল্য ১০ হাজার টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ধার্যকৃত মূল্য ৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। নতুন ভবনের ব্যবহারের জন্য অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে রাজউক থেকে বাধ্যবাধকতা প্রয়োগ করা হয় না। বিগত পাঁচ বছরে অনুমোদিত নকশার মধ্যে মাত্র ৪৮০টি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছেন গ্রাহকরা। প্লট মালিকদের ৭০০টিরও বেশি ফাইল হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর এসব ফাইল খুঁজে দিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত অবৈধ অর্থ আদায় করছেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের বিলের টাকা উত্তোলনের সময় বিলের একটি অংশ বা ২ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, টিআইবির গবেষক ফাতেমা আফরোজ ও ফারহানা রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

টিআইবির প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, অনুমানভিত্তিক অভিযোগ এনে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবণতা এটা। রাজউক জনবান্ধব বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে ইতিমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply