সাংবাদিকদের ফোন ছিনিয়ে ‘জামায়াত’ বলে জিডি; বেপরোয়া ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ বহিষ্কার

|

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ‘বিএনপি জামায়াতের এজেন্ট’ ট্যাগ দিয়ে লাঞ্ছনা করার দায়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদকে সংগঠনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ ফেব্রুয়ারি এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

রিয়াদ ও তার সহযোগীদের হাতে হেনস্থার শিকার তিন সাংবাদিক হলেন- বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক মাহবুব মমতাজি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর ও দিন প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিবেদক পাপন।

ভুক্তভোগীরা জানান, সিটি নির্বাচনের দিন তারা তিনজন অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে গেণ্ডারিয়ার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ভোটকেন্দ্রের বুথে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট প্রদান শেষে দুই ভোটারকে বের করে দেন কোমরে অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে অবস্থান করা ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ। ওই দু’জন বারবার অনুরোধ করে বলছিলেন, আমরা নৌকার সমর্থক এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চাই। এ সময় রিয়াদ তাদের বলেন, নৌকায় ভোট হয়ে গেছে, চলে যান।

সাংবাদিক নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর বলেন, এ ঘটনা দেখে আমরা ওই দুই ভোটারের ছবি তুলি এবং তাদের মতামত নিই। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ এসে আমাদের জামার গলার ধরে টানাহেঁচড়া এবং ভোট পরিদর্শন কার্ড ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে রিয়াদ তার সহযোগীদের দিয়ে আমাদের জোরপূর্বক আটকে রেখে আমাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। আমরা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ থাকি।

অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা কেন্দ্র ইনচার্জ গেণ্ডারিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদ এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আরিফকে বিষয়টা জানালে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান। বিষয়টি তারা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তারিকুল ইসলামকেও জানান।

বেলা ১২টার দিকে পুলিশের ওয়ারি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হান্নানুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে ওই দুই সাংবাদিক বিষয়টি তাকে জানান। এরপর তিনি রিয়াদকে মোবাইল দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। পরে রিয়াদ পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই সাংবাদিকদের মোবাইলের পাসওয়ার্ড নিয়ে যাবতীয় তথ্য মুছে দেন। এরপর মোবাইলফোন ওই দুই সাংবাদিককে দিয়ে দেন। মোবাইলের তথ্য মুছে দেওয়ার সময় পুলিশের সামনে রিয়াদের কোমরে অস্ত্র বহন করতে দেখা যাচ্ছিল, তার কালো জ্যাকেটের এক পাশে অস্ত্রের একটি অংশ বেরিয়েছিল।

এদিকে, গত রোববার রাতে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ ও পেশাদার তিন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে গেন্ডারিয়া থানায় জিডি করেন রিয়াদ। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ওই তিন সাংবাদিক ভোটকেন্দ্রে বিএনপি-জামাতের এজেন্ট হিসেবে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।

ছাত্রলীগ নেতার এমন বেপরোয়া আচরণ ঘিরে সর্ব মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। এই প্রেক্ষিতে রিয়াদকে সাময়িক বহিস্কার করেছে ছাত্রলীগ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply