হাতে লিখে নয় মনের বলে পরীক্ষা দিচ্ছে মিনারা

|

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
অদম্য মেধাবী মিনারা। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। বসেছে দাখিল পরীক্ষা হলে মনের বলে কব্জির জোরে কলম চলে তার। সমান তালে লেখেই চলছে। একটাই মিশন তার ভালো ফল আর মানুষের মতো মানুষ হওয়া এবং প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও কোন বাঁধাই আটকিয়ে রাখতে পারেনি কুড়িগ্রামের চিলমারীর মিনারা খাতুনকে।

জন্মের কিছুদিন পর মাকে হারায় সে। এরপর বাবা বিয়ে করেন সংসারে আসে নতুন মা। বাবা দিনমজুর দিন আনে দিন খায় অভাবের সংসার। এক থাকার আশ্রয় স্থান ছিলো বাঁধে তাও ভেঙ্গে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাধার উপর বাধা এরপরও নেই দু’হাতের আঙ্গুল তবুও প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে এবারের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মিনারা।

মিনারা চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার রফিকুল ইসলাম ও মৃত মর্জিনা বেগমের মেয়ে। মিনার কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট।

জানা গেছে, জন্ম থেকেই তার ২ হাতের কব্জি বাঁকা, নেই আঙ্গুল তবুও থেমে যায়নি মিনারা। এবারে দাখিল পরীক্ষা অংশ নিয়ে দু’হাতের কব্জিতে কলম চেপে ধরে সমানে লিখে চলেছে উত্তর। মিনারার দুই হাতের কব্জির সাহায্যে লিখেই একে একে ৫ম শ্রেণির সমাপনী (পিএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পাস করে ভালো ফলাফল অর্জন করে। সে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।

মিনারা উপজেলার কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী। নানা বাধার মধ্যে থেমে না গিয়ে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম ধরে সে লেখাপড়া চালিয়ে আসছে। এভাবে কব্জির সাহায্যে সে সাংসারিক বিভিন্ন কাজে বাবা ও সৎ মাকে সহায়তা করেছে। ছোট বেলা থেকেই তার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা মা তাকে স্থানীয় কেডি ওয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। মিনারা পড়তে পারলেও লিখতে পারেনি। তারপরও সে মনবল হারায়নি কখনো। অদম্য সাহসের সঙ্গে বড় বোনের সহায়তায় বাড়িতে বসে বসে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম জড়িয়ে ধরে লিখতে শেখে মিনারা। স্কুলের শিক্ষকগণ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতই যত্ন সহকারে তাকে লেখাপড়া শেখাতে থাকেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা থেকে সে উপবৃত্তি যা পায় তা দিয়ে কষ্ট হলেও চলে তার লেখাপড়ার খরচ। এর উপর শেষ আশ্রয়স্থল অবদা বাঁধের থাকার স্থানটুকু ছাড়তে হয়েছে। কোন উপায় না থাকায় বড় বোনের বাাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চলতি দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মিনারা।

কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আইয়ুব আলী আকন্দ জানান, মিনারা ছাত্রী হিসেবে ভালো। মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সকল প্রকার দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম।

রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুই হাতের সাহায্যে লিখে মিনারা ভাল পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়েটি ফলাফল ভাল করবে বলে আমরা আশাবাদি।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, আমি দেখিছি এছাড়াও আমার মনে হয়েছে তার মাঝে অনেক গুন রয়েছে সে ভালো কিছু করতে পারবে। তিনি আরো বলেন আমরা চেষ্টা করবো সহযোগিতা করাসহ তার পাশে থাকার।

মিনারা খাতুন বলেন, সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন বড় হতে পারি এবং মানুষের সেবা করতে পারি পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে পারি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply