বায়ুদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ঢাবির শিক্ষার্থীরা

|

বায়ুদূষণের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। যত্রতত্র অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, মেট্রোরেলের বিশাল কর্মজজ্ঞ, দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজই দূষণের জন্য দায়ী। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে এ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, মেট্রোরেলের বিশাল কর্মযজ্ঞ ও বছরজুড়ে ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে সৃষ্ট ধুলা-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন কাজের জন্য ক্যাম্পাসের সড়ক খোঁড়া হলেও পরে আর তা মেরামত করা হচ্ছে না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলোতে কোনো ধরনের পানি ছিটানো ছাড়াই ঝাড়ু দেয়ায় তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় বর্জ্যতে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় ধোঁয়া ও ছাই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাতাস বিষিয়ে উঠছে।

এছাড়া ফিটনেসবিহীন বিভিন্ন যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে বাড়ছে দূষণ। শীতকাল হওয়ায় দূষণ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। এতে করে এই এলাকায় চলাচলকারী লাখো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীরাও দূষণের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা বাসগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ওয়েল লিকিং হয় অরগানিক পলিউশনেও নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, বায়ুদূষণের ফলে ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। ফুসফুসকেন্দ্রিক রোগ বিস্তারের পাশাপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী বলেন, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা জাতীয় রোগের চিকিৎসা করানোর জন্য শিক্ষার্থীরা আসছেন। আর এসব রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। এসব রোগ থেকে বাঁচাতে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক পরার উপদেশ দিয়েছি। যেসব স্থানের বায়ু অধিক মাত্রায় দূষিত সেসব স্থানে ঘোরফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে শ্বাসজনিত নানা রোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার ও জেনেটিক পরিবর্তনজনিত নানা অজানা রোগে ভুগতে হবে। এতে একদিকে যেমন চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে, অন্যদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাহত হবে।

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসাইনের অভিযোগ- মেট্রোরেলের কাজ যখন শুরু হয় তখনই আমি নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলাম ক্যাম্পাসের বায়ুদূষণ রোধে। যাতে নিয়মিত রাস্তাগুলোতে পানি দেয়া হয়। কিন্তু অল্প কয়েকদিন দেয়ার পর এখন অনিয়মিতভাবে পানি ছিটানো হচ্ছে যার ফলে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের উৎস বন্ধ করতে হলে নতুন করে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কি কি উপায় অবলম্বন করলে নির্মাণ কাজ চলাকালে বায়ুদূষণ কম হবে সেগুলো ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। আর এজন্য ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা আবশ্যক।

ড. সালাম আরও বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের বায়ুদূষণে অনেক উৎস রয়েছে। তার মধ্যে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ অন্যতম। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা বাসগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ওয়েল লিকিং। ওয়েল লিকিংয়ের কারণে অরগানিক পলিউশন হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তাদের আমরা আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলেছি। যাতে বায়ুদূষণ না হয় কিংবা সহনীয় মাত্রায় থাকে। এ বিষয়ে তদারকি আরও জোরদার করতে হবে।
সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply