মাশরাফীকে অপমানজনক কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো?

|

শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে হঠাৎই আবেগী হয়ে পড়েন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নে স্বভাবের বাইরে গিয়ে অভিমান নিয়ে উত্তর করেন ম্যাশ। আসলে কী প্রশ্ন করা হয়েছিল মাশরাফীকে? সেখানে অপমানজনক কিছু ছিল?

সিলেটের প্রেসবক্স থেকে সেটিই বোঝার চেষ্টা করেছেন যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার তাহমিদ অমিত। কথা বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে।

দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার খাইরুল আমিন তুহিন বলেন, প্রশ্নটা আসলে অসম্মানের নয়, আর তিনিও খুুব মিডিয়া ফ্রেন্ডলি। মাশরাফী বর্তমানে এতটা এভেইলেভল না। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে প্রচুর সময় দেয়ার কারণে মিডিয়া তাকে পায় না। আসলে সেখানে বিসিবি সভাপতির কথা ধরে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ক্যাপ্টেন হিসেবে তার শেষ সিরিজ কিনা? তিনি ক্রিকেটে ফিরতে কতটা মরিয়া। পৃথিবীর সব সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের প্রশ্ন আসে। প্রশ্নটা তাকে উজ্জীবিত করার জন্যই ছিল, কথার একটি অংশ ধরে তিনি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন। আসলে আজকে অধিকাংশ প্রশ্নই ছিল তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে। এবারের সিরিজ কি তার শেষ সিরিজ কিনা এরকম প্রশ্ন।

তুহিন বলেন, মাশরাফীর প্রচুর ধৈর্য। তাছাড়া তাকে কেউ আঘাত করতে পারে এমন কিছু আমাদের মিডিয়া করতে পারে বলে মনে হয় না। চারদিকে তার অবসর নিয়ে খুব কথাবার্তা, চর্বিত চর্বন হচ্ছে, আর মিডিয়ার সামনে আসার পরও এমন প্রশ্ন শোনার কারণেই হয়তো তিনি মেজাজ হারিয়েছিলেন।

ডেইলি স্টারের ক্রীড়া সাংবাদিক একুশ তাপাদার বলেন, আমার মনে হয় না প্রশ্নকর্তা কোনো নেগেটিভ মোটিফ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। হয়তো কয়েকটি শব্দ তার কাছে নেগেটিভ মনে হয়েছে তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর মাশরাফী বাংলাদেশের সফলতম একজন ক্রিকেটার ফলে তার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি নিয়েও মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ আছে, আর এই সিরিজ যদি ক্যাপ্টেন হিসেবে মাশরাফীর শেষ সিরিজ হয় তাহলে তার কভারেজ নিয়েও মিডিয়ার যথেষ্ট আগ্রহ থাকার কারণ রয়েছে। মিডিয়া আসলে সেই বার্তাটাই স্পষ্টভাবে তার পাঠকদের জানাতে চেয়েছে। আর মাশরাফী যথেষ্ট মিডিয়া ফ্রেন্ডলি ফলে তাকে অসম্মান করার মতো কোনো প্রশ্ন আমাদের মিডিয়া করবেও না।

সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি আলী সেকান্দার মনে করেন, যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা প্রাসঙ্গিক ছিল। তিনি বলেন, আগে কিছু বর্ণনা দিয়ে তা করা হয়েছে। তাকে বলা হয়নি যে আপনি আত্মসম্মান নিয়ে সরে যান বা আপনার আত্মসম্মান আছে কিনা? তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসাতে তা আপনার আত্মসম্মানে লাগে কিনা বা আপনার সম্মানহানী হয় কিনা। মাশরাফী ‘আত্মসম্মান’ শব্দটা নিয়ে কথা বলেছেন। ওনার মতো একজন বড় ক্রিকেটারকে আমরা অসম্মান করতে পারি না। আর বোর্ড সভাপতি তার ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে এক ধরনের বিবৃতি দিয়েছে কিন্তু এটি তার শেষ ক্যাপ্টেন্সি কিনা তা নিয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি। ফলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মাশরাফী কিন্তু স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন, যতদিন খেলে যাওয়া যায়; তখন তার অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর। আর বিসিবি যেহেতু তাকে ক্যাপ্টেন্সি দিয়েছে তার ব্যাপারে ক্লিয়ার করতে হবে বোর্ডকেই।

বোর্ড তাকে কতদিন খেলাবে তা বোর্ডের ব্যাপার তবে ক্যাপ্টেন মাশরাফী হিসেবে এটি তার শেষ সিরিজ কিনা তা স্পষ্ট করা বোর্ডের দায়িত্ব।

উল্লেখ্য, শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে মাশরাফীকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “ক্যাপ্টেন, বিষয়টা শেষ পর্যন্ত… যে প্রশ্নগুলো আপনার কাছে আসে অনেকটা আত্মসম্মানের এবং যে জায়গায় আপনি দাঁড়িয়ে আছেন বিশেষ করে দশ ম্যাচে উইকেট নেই; তো ২০০১ সালে আপনি যখন শুরু করলেন, জিম্বাবুয়ের সাথেই শুরু হয়েছিল, এরপর ২০০৭ যদি ধরেন ২০০৮ যদি ধরেন ৩টা ম্যাচ/৪টা ম্যাচ উইকেট পাননি; কিন্তু আপনি ফিরে এসেছেন বরাবরই। এ পরিস্থিতিতে আপনি কখনও পড়েননি। এখন অপোনেন্টটা জিম্বাবুয়ে, এটা কী কোনো এক্সট্রা মোটিভেশন দেয়? আপনার যদিও মোটিভেশনের দরকার পড়ে না…”

প্রশ্নটি সহজভাবে নিতে পারেননি মাশরাফী। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই বলেছেন, আত্মসম্মান বা লজ্জার কথা বলছেন, আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর? খেলার সঙ্গে লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ—আমি মেলাতে পারি না। এত জায়গায় এত চুরিচামারি হচ্ছে, তাদের লজ্জা নেই। আমি মাঠে উইকেট না পেলে আমার লজ্জা লাগবে, আমি কি চোর? উইকেট আমি না-ই পেতে পারি। আমার সমালোচনা আপনারা করবেন, সমর্থকেরা করবে। লজ্জা পেতে হবে কেন?

আবেগী গলায় মাশরাফী বলেন, আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি নাকি অন্য কোন দেশের হয়ে খেলছি যে আমার লজ্জা পেতে হবে? আমি পারিনি আমাকে বাদ দিয়ে দেবেন। জিনিসটা তো সিম্পল। এখন কথা হচ্ছে আমার লজ্জা বা আত্মসম্মানবোধ আমি কার সঙ্গে দেখাতে যাব। আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামছি। আমি কি বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষের মানুষ?

তার মতে, মাঠের পারফরম্যান্স উঠানামা করবেই। পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্লেষণ, সমালোচনা- সবই হবে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ মিশিয়ে ফেলা কেনো? বলেছেন, যে কেউই পারফর্ম নাই করতে পারে। তার ডেডিকেশন, কোনো জায়গায় লেকিং থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। আরেকটা সমালোচনা হতে পারে, যেটা কমন, সারা বিশ্বেই হচ্ছে যে আমি উইকেট না পেলে আমার সমালোচনা হতেই পারে। কিন্ত কথাটা যখন আসে লজ্জা আর আত্মসম্মানের, তখন আমার প্রশ্ন থাকে। আমার সমালোচনা করুক, আমি ক্রিকেট খেলতে এসে কি আমার আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে আসছি নাকি? সুতরাং এই জিনিসটার সঙ্গে আমি মোটেও একমত নই।

মাশরাফী এমন আবেগী উত্তরে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সবারই জিজ্ঞাসা, কী প্রশ্ন করা হয়েছিল ম্যাশকে?


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply