দখল-দূষণে বিলীনের পথে কল্যাণপুর খাল

|

দখল-দূষণে বিলীনের পথে কল্যাণপুর খাল। এটি কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি দিয়ে কল্যাণপুর থেকে দারুসসালাম এলাকার গৈদারটেক হয়ে বেড়িবাঁধের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে এটি বগারমার খাল, কল্যাণপুর ক, খ ও চ খাল নামে পরিচিত। দখলের কারণে বর্তমানে এটি নালায় পরিণত হয়েছে। কাগজে-কলমে ৬০ ফুট হলেও বাস্তবে কোথাও কোথাও ৩ ফুটেরও কম প্রশস্ত রয়েছে।

অনেক স্থানে এর অস্তিত্বও নেই। পানি নিঃষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম এ খালের দু’পাশ সংকুচিত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে মিরপুরের লাখ লাখ মানুষ। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হলেও তা আবারও দখল হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, এ খালে আশির দশকে মিরপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পালতোলা নৌকা চলত। সময়ের বিবর্তনে এটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তূপ ও আবর্জনায় ভরে গিয়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে। দুর্গন্ধে ওই এলাকায় বসবাস করা যেন দায়। বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করে খালের জায়গা চিহ্নিত করা হলেও বন্ধ হয়নি দখলের মহোৎসব।

খালের জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নামে স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ভূমিদস্যু ও দখলদারদের কারণে এক সময়ের খরস্রোতা খালটি আজ বিলীনের পথে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা এখনই সংস্কার ও দখমুক্ত করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে কল্যাণপুর খাল।

সরেজমিন কল্যাণপুর ১১নং রোডের পূর্বমাথায় গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দনভাবে এসপি রোড থেকে কল্যাণপুর কালভার্ট পর্যন্ত খালের দু’পাড়ে (কল্যাণপুর ও আগারগাঁওয়ের মাঝামাঝি অংশ) ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

ব্লক (সিমেন্টের কংক্রিট দিয়ে তৈরি চারকোণা আকৃতির বস্তু) দিয়ে বাঁধাই করা রয়েছে খালের দু’পাশ। কিছু জায়গায় ব্লক উপড়ে ফেলে গাছ ও শীতকালীন সবজির চাষ করা হচ্ছে। এতে ব্লক দুর্বল হয়ে ওয়াকওয়ে দেবে গেছে।

জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬ সালে খালের দু’পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ঢাকা ওয়াসা খালের পাশে তাদের নিজস্ব জায়গা বুঝে নিতে না পারায় কিছু স্থানে ওয়াকওয়ে প্রশস্ত করা যায়নি।

খালের দক্ষিণ পাশে ওয়াকওয়ে নির্র্মাণের কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওয়াকওয়ের কিছু অংশ দখলে থাকায় জায়গা দখলমুক্ত না করে সংকুচিতভাবে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়।

এতে পাশাপাশি দু’জন মানুষ হাঁটতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কল্যাণপুর ১১ নম্বর রোডের মাথায় খালের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

অবৈধ স্থাপনা ও ঘরবাড়ি থাকায় ৬০ ফিট যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ অংশে খালের ১০ ফিট জায়গা দখলে রয়েছে।

কল্যাণপুর কালভার্ট থেকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে (ইবনেসিনা হাসপাতালের বিপরীত পাশ) অগ্রসর হলে চোখে পড়ে খালের পানিতে ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনের স্তূপ জমে রয়েছে।

খালের জায়গায় মাটি ভরাট করে রিকশার গ্যারেজ ও বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনের স্তূপের কারণে প্রতিনিয়ত পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অংশে খালটি পুরোপুরি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খলিল, মোক্তার ও সাহেব আলী বলেন, এই খাল দিয়ে হাট-বাজারে নৌকায় যাতায়াত করেছি। আজ সেই খাল আর খাল নেই। ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে নালায় পরিণত হয়েছে। চোখের সামনে খালের জায়গা দখল হয়ে গেছে।

সামান্য বৃষ্টি হলেই এই এলাকা পানিতে ডুবে যায়। ফলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না; আমাদের দেখার কেউ নেই। দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

লোকদেখানো উচ্ছেদ হলেও আবার দখল হয়ে যায়। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের নেতারা ভূমিদস্যুরূপে আবির্ভূত হয়ে দখল করে নেয় খালের জায়গা। ভূমিদস্যু কারা- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, খালের পাড়ে যাদের বাড়িঘর তারাই মূল দখলদার। সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে খালের জায়গা দখল করেছে। আবার অনেকে জায়গা বিক্রি করে চলে গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান বলেন, খালের ময়লা-আবর্জনা কয়েকবার পরিষ্কার করা হয়েছে।

খালের পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধাই ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ না করাতে ওয়াসার জায়গা দখল হচ্ছে। খাল উদ্ধারে ওয়াসাকে ভূমিকা নিতে হবে। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি খাল পরিষ্কার ও দখলমুক্ত রাখতে।

আমি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে ও পরে এই খাল রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি প্রায়ই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাই।

কিছুদিন পরে আবার দখল হয়ে যায়। খাল রক্ষার দায়িত্ব যদি সিটি কর্পোরেশনের হতো, তাহলে আমি অনেক আগেই এ খালের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারতাম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply