হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মাবলী নিয়ে তথ্য অধিদফতরের বিশেষ নির্দেশনা

|

করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে থেকে বিদেশফেরত প্রবাসীসহ দেশের অন্যান্য নাগরিকদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়মনীতি ও নির্দেশনামূলক বার্তা দিয়েছে তথ্য অধিদফতর।

আজ রোববার এক বার্তায় তারা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মনীতি সম্বলিত এসব নির্দেশনা দেয়।

সেখানে বলা হয়- কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে বলা হয়েছে, সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে সেইসাথে ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে।

যে ঘরে কোয়ারেন্টাইন করা হবে সে ঘরে যাতে আলো বাতাসের সুব্যবস্থা থাকে সে ব্যপারেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়ির অন্য সদস্যদের সাঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করা সহ সম্ভব না হলে অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমিয়ে ঐ স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকা ও মাস্ক ব্যববহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ব্যবহৃত মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলা ও সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত টিস্যু পেপার ও মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলতে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একইসাথে ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির খাওয়ার বাসনপত্র-থালা, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে বিছানার চাদর অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি না করে এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করার কথা বলা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন সকলের সাথে ফোন/মোবাইল/ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখতেও বলা হয়।

বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে বলা হয়েছে।

কোন শিশুকে কোয়ারেন্টাইন করার প্রয়োজন হলে তাকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝানো ও পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিতে বলা হয়। সেইসাথে খেলনাগুলো খেলার পর জীবাণুমুক্ত করতে বলা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সাথে কোনো পশু/পাখি না রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির দৈনন্দিন রুটিন, যেমন- খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। সেইসাথে চাকুরীজীবী হলে সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপযুক্ত নিয়মগুলোর সাথে পরিপন্থী নয় এমন যেকোন বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, পরিবারের সদস্য যারা সুস্থ আছেন এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগসমূহ (যেমন: ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তবে তিনি ঐ ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে আছেন এমন ব্যক্তির সাথে কোন অতিথিকে দেখা করতে দিবেন না। সেইসাথে পরিচর্যাকারীকে খালি হাতে ঐ ঘরের কিছু স্পর্শ না করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বাতাস ঘরে ঢুকলে; খাবার তৈরির আগে ও পরে; খাবার আগে; টয়লেট ব্যবহারের পরে; গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে; যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হবে, প্রতিবার দুই হাত পরিষ্কার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ঐ রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখা ও এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

করোনা থেকে সতর্ক থাকতে ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করা ও পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান/কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে এবং তা ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে।

বলা হয়, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকানো থেকে বিরত থাকা ও সেই কাপড় নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় ব্যক্তির কোন উপসর্গ দেখা দিলে (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি জ্বর/কাশি/সর্দি/গলাব্যাথা/শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি), অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে অবশ্যই যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় জেনে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সেখানে জানানো হয়, কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মতে একজন হতে অন্যজনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওঢয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply