করোনা আতঙ্কে ঘরছাড়া করলো স্বজনরা, রাস্তায় কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধা

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে আসার পর হঠাৎ জ্বর হওয়ায় করোনা আতঙ্কে পঞ্চাশ বছরের স্বামী পরিত্যক্তা এক বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে সৎ ভাই-বোনেরা। তার ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। কোন উপায় না পেয়ে রাস্তার পাশে কাগজ বিছিয়ে সারারাত পার করছেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় সেখানেই তিনি খোলা আকাশের নিচে জ্বরে কাতরাচ্ছেন।

পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের খালগোড়া এলাকার ঘটনা এটি। ঘরছাড়া ওই বৃদ্ধার নাম রেনিস বেগম মালা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঊনিশ নম্বর গ্রামের মৃত নূর হোসেন হাওলাদারের মেয়ে তিনি। এতদিন ঢাকার উত্তর মুগদাপাড়ায় বসবাস করছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। স্বামীর সঙ্গে দূরত্বের পর থেকেই তিনি মূলত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এক সপ্তাহ আগে রেনিস ঢাকা থেকে রাঙ্গাবালী এসেছেন। কয়েকদিন ঊনিশ নম্বর গ্রামে বসবাসরত বোনজামাই শাবু হোসেনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। কোন উপায় না পেয়ে খালগোড়া বাজারে বসবাসরত সৎ ভাই জসিম হাওলাদারের কাছে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও তার ঠাঁই হয়নি। ঘরে থেকে বের করে দিয়েছে তাকে। অসুস্থতার কারণে রেনিসের কোন আত্মীয়-স্বজন তার পাশে দাঁড়ায়নি। পরে নিরুপায় হয়ে রোববার রাত থেকে খালগোড়া বাজারের চৌরাস্তায় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই নেয়।

খালগোড়া বাজারের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাত ৮টার দিকে চৌরাস্তায় একটি দোকানের সামনে রেনিস নামের ওই নারী অসুস্থ অবস্থায় এসে আশ্রয় নেয়। সেখানে তিনি কাতরাচ্ছিল। তাদের দাবি, তিনি মানসিক ভারসম্যহীন।

স্থানীয়দের ধারণা, ঢাকা থেকে আসা ওই অসুস্থ বৃদ্ধাকে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কোন আত্মীয়-স্বজন আশ্রয় দিতে চাচ্ছে না। এবিষয়ে জানতে রেনিসের ভাই জসিম হাওলাদারের মোবাইলে কল করলে স্বামীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে কেউ রেনিসকে ঘরে উঠাতে চায় না। আমি ভাড়া বাসায় থাকি। আমার বাড়িওয়ালায় কি তারে উঠাতে দিবে? সে এতদিন বোনজামাইয়ের বাড়িতে ছিল। আমার স্বামীর বাসায় উঠানোর মিথ্যা কথা বলে রেনিসের বোনের ছেলে রবিন তাকে ফেলে যায়।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাশফাকুর রহমানের ধারণা পারিবারিক কলহের জেরে সৎ ভাই বোনেরা ওই মহিলাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে অথবা তিনি নিজে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে। সেটা জানতে কিছুটা সময় দরকার। তিনি জানান, ঘটনা যাই হোক সোমবার দুপুরে তাকে উপজেলায় পাঁচ শয্যা যে করোনা ইউনিট রয়েছে সেখানে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হবে এবং দিনভর তাকে এখানেই রাখা হবে। তারপর সুস্থ হলে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এছাড়া তার শরীরে যদি করোনা সম্পর্কীয় কোন ধরণের লক্ষণ দেখা যায় তবে তাকে দ্রুত পটুয়াখালী হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপরেও গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত ওই মহিলার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীসহ যাবতীয় সবকিছু দেখভাল করা হচ্ছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply