মধ্যবিত্ত ভাবনা- বাড়িভাড়া বনাম হোল্ডিং ট্যাক্স

|

তৌহিদুল ইসলাম:

ফেসবুকের টাইমলাইন জুড়ে করোনা। মহামারির সতর্কতা, উদ্বেগ-আতঙ্ক, ব্যক্তির বদলে যাওয়া জীবন, অর্থনীতি- নানা প্রসঙ্গের সাথে দেখছি বাড়িভাড়ার কথা। পরিচিত-অপরিচিত অনেকে জানান দিচ্ছেন, তিনি বা বাবা-মা বাড়িভাড়া নেবেন না, এক বা দু’মাস। অথবা কমিয়ে শুধু ইউটিলিটি বিল নেবেন। মানবিক জায়গা থেকে যারা এরকম উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করলাম না! আপনারা আসলেই একেকজন রাজা।

এই বাড়িওয়ালাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসবের মাঝেই চোখে পড়ল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও এরকম একটা আহ্বান জানাচ্ছেন। ডিএনসিসি’র পেইজে না থাকলেও একটি অনলাইনে (ভিডিও) তিনি বলছেন, বিশেষ করে বস্তিবাসীর ভাড়া পারলে পুরোটা মওকুফ করেন। পুরো এক মাসের মওকুফে অসুবিধা হলে, যতটা সম্ভব বাড়িওয়ালারা যেন করেন! আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, দুর্যোগে মানুষের উপকার করার সুযোগ বাড়িওয়ালারা যেন কাজে লাগান। অর্থাৎ সামর্থ্য অনুযায়ী ভাড়া মওকুফ করতে বলছেন মেয়র। শেষের প্রশ্নটি ছিল যেসব বাসার ভাড়া ১৫/২০ হাজার টাকা মতো সেগুলো নিয়ে অর্থাৎ নিম্ন মধ্যবিত্তদের ইঙ্গিত করা হচ্ছিল।

বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সিটি করপোরেশন। বাড়ির লোকেশন, আয়তন, বসবাসকারী- সব তথ্যই সংরক্ষণ করে তারা। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই চার প্রান্তিকে বা বছরের জন্য আদায় করা হয়, হোল্ডিং ট্যাক্স। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আয় করবে ৪৪০ কোটি টাকা। আর দক্ষিণ সিটির আয় ধরা হয়েছে, এ খাতে ৩৫০ কোটি টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের গণিত খুব সহজ নয়, তাই সে ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। মোটা দাগে বাসা ভাড়ার ১২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে নেয় সিটি করপোরেশন। বিজলি বাতি এবং পরিচ্ছন্নতার ঘরে দেখানো হয় ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ভাড়ার ৭ ভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স। যারা নিজের বাসায় থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ কর কম।

এখন মোটা দাগে যদি ধরি, একটি বাসার ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। তাহলে ৭ শতাংশ হয় হাজার ৫০ টাকা। মাননীয় মেয়র, যারা বাসা ভাড়া মওকুফ করেছেন, তারা এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে বা না নিয়ে করেছেন। কিন্তু আপনি মহানগরীর অভিভাবক হিসেবে অন্য কাউকে যখন অনুরোধ করেন ছাড় দেয়ার, তখন ওই ভান্ডারে (আদায় করা হোল্ডিং ট্যাক্স) হাত দিলে কি খুব ক্ষতি হবে? এ দুর্যোগের কালে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের মাথাব্যথার বড় কারণ হবে বাড়ি ভাড়া। যেখানে ১৫ হাজার টাকা ভাড়ার প্রায় এক হাজারই সিটি করপোরেশনের হাতে। এটি বাড়িওয়ালার না। আমার অনুরোধ, দুই সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্সের, বসবাস অংশ অন্তত ৩ মাসের জন্য মওকুফ করুক। এতে রাজস্ব আয় কমবে। কিন্তু অংকটা খুব বেশি বড় হবে না। ৪৪০ যোগ ৩৫০ বা ৭৯০ কোটি টাকা যোগ-বিয়োগ করলে, এক প্রান্তিকে শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স (পরিচ্ছন্নতা ও বিজলি বাতি বাদ) সোয়াশ’ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এর ফলে প্রত্যেক বাড়িওয়ালাকে (ভাড়া যদি হয় ১৫ হাজার) কমপক্ষে এক হাজার ৫০ টাকা ভাড়া কমাতে হবে। মেয়র হিসেবে তখন আপনি নির্দেশ দিতে পারবেন আপনার ভোটারদের জন্য।

করোনা কাউকে ছাড়ছে না। জীবনের অচলাবস্থা কবে ঠিক হবে, নিশ্চিত করে সেটি বলার উপায় নেই। পৃথিবীব্যাপী ধনী ব্যবসায়ীরা আছেন, লোকসানের কবলে। এ অবস্থায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং কর্মীরা সবচেয়ে বেশি আর্থিক ঝুঁকিতে। এ ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত এবং নির্দিষ্ট আয়ের লোকজনের বিষয়টিই হয়ে ওঠতে পারে মাথাব্যথার কারণ। বাড়ি ভাড়ায় ছাড় পাওয়ার অধিকার তাদেরও থাকা উচিত।

লেখক: যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক, যমুনা টেলিভিশন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply