ঠুনকো অজুহাতে বাইরে, মানছেন না দূরত্ববিধি

|

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলছে সাধারণ ছুটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে বিনাকারণে সাধারণ মানুষের বাইরে বের হওয়া কিছুটা কমেছে। তবে বন্ধ হয়নি। ‘অতিপ্রয়োজনে’ মানুষ যেমন বের হচ্ছেন, তেমনি ঠুনকো অজুহাতেও বাইরে বের হচ্ছেন অনেকেই।

বাজার, মহল্লার দোকান, মসজিদ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন তারা। চড়ছেন রিকশা-সিএনজি, অফিস বা ব্যক্তিগত পরিবহনে। আর এদের বেশিরভাগই মানছেন না ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নিয়ম।

বাজারে একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। একই পরিবহনে বসছেন পাশাপাশি। অনেকেই বন্ধু-পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে-বসে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অলি-গলিতে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেও নিয়ম মানা হচ্ছে না। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও একই চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিরা।

রাজধানীর রামপুরা ও মধুবাগ বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে একে অন্যের তিন থেকে চার ফুট দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সে প্রবণতা তেমন দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্বের জন্য চিহ্ন দেখা গেছে। কেউ কেউ তা মানার চেষ্টাও করছেন।

সুপারশপগুলোর প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা গেলেও রাজধানীর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতে এমন কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। তবে কোনো কোনো দোকানদারকে মাস্ক ও গ্লোভস পড়তে দেখা গেছে। দোকানের সামনে জটলা করে বাজার-সদাই করছেন ক্রেতারা।

দু-একজন একটু দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও অন্য কেউ এসে দাঁড়াচ্ছেন গা ঘেঁষে। জানতে চাইলে মীরবাগ নতুন রাস্তার এক মুদি দোকানি বলেন, সচেতন থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু কতক্ষণ আর থাকা যায়? সবাইকে একটু দূরে দাঁড়াতে বলি। অনেকেই শুনতে চান না। কাস্টমারদের তো চলে যেতে বলা যায় না।

খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে দুস্থ ও নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের সহযোগিতায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্বের সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না।

শুক্রবার রাজধানীর কুড়িল, রামপুরা ও প্রগতিসরণিসহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, দুই পাশেই পাঁচ-দশ, পনেরো-বিশ বা কোথাও তারও বেশি মানুষকে একত্রে বসে থাকতে দেখা যায়। কর্মহীন এসব মানুষ বসেছিলেন ত্রাণের আশায়। বেশিরভাগের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।

গণপরিবহন বন্ধ হলেও অতিপ্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেককেই রাস্তায় রিকশা, সিএনজি বা অফিসের গাড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে- এক রিকশায় উঠেছেন একাধিক যাত্রী।

মোটরসাইকেল বা সিএনজিতেও দুই বা ততোধিক মানুষকে একত্রে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসেও গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে দেখা গেছে অনেককেই।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলিগলিতে বিভিন্ন বয়সী লোকের ভিড়। বিশেষ করে মহল্লার টি-স্টল, মোড়, বাসা-বাড়ির সামনে তরুণ ও কিশোরদের আড্ডাও চোখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের সময় একটু সরে গেলেও কিছু সময় পরে আবার আড্ডা চলছে আগের মতো। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছেন তারা। নিয়ম রক্ষায় মাস্ক পড়লেও অনেকেই তা নামিয়ে রেখেছেন গলায়। এছাড়া বিকালে বাসার ছাদে বা গলির মোড়ে ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলা করতেও দেখা গেছে।

শুক্রবারও সকাল থেকেই সেনাবাহিনীসহ আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় ছিল সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট। রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়- যানবাহন ব্যবহারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

হেঁটে যারা ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলেন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা কী কারণে রাস্তায় বের হয়েছেন এবং কোথায় যাচ্ছেন এসব প্রশ্ন করা হয়। যারা এক রিকশায় দু’জন ছিলেন তাদের দুই রিকশায় যাওয়ার জন্য বলা হয়।

মোটরসাইকেল আরোহীদের দু’জন থাকলে একজন নামিয়ে দেয়া হয়। আবার যারা মাস্ক ছাড়া বের হয়েছিলেন তাদের মাস্ক পরতে বলা হয়।

মাঠপর্যায়ে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য বলেন, আমরা বেশ কিছু মানুষকে পাচ্ছি যারা রাস্তায় বের হয়েছেন শুধু ঘোরাফেরা করার জন্য। আমরা সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছি। তাদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে অনেককে মামলাও দেয়া হচ্ছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply