নুসরাতের ছোট ভাইয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল

|

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের এক বছরে তার ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ফেসবুক আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে স্ট্যাটাসটি পোস্ট করার পর পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

রায়হানের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘দেখতে দেখতে একটি বছর পার হয়ে গেল।

যদিও এই তিনশ পয়ষট্টি দিন আমাদের কাছে ছিল তিনশ পয়ষট্টিটি রক্তগঙ্গা পাড়ি দেয়ার সমান। প্রতিদিন অবিরত অশ্রুর ধারা বহে গেছে নীরবধি। জানি না আর কতদিন এই উপলব্ধি আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে।

গত বছর ১০ এপ্রিল এই দিনে আমার আপু হায়েনাসদৃশ কিছু নরপশুর রক্তলোলুপতার শিকার হয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছে। সবাই জানেন, এর আগে জেলে থাকা সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে ৬ এপ্রিল নিজের মাদ্রাসায় আমার আপুর গায়ে কেরোসিন ঢেলে নির্মমভাবে পুড়িয়ে দেয় খুনিরা।

কিন্তু আমার বোন মাথা নত করেনি। আমার আপু হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহী এক প্রতীক। আপুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আপুকে উৎসর্গ করে আমার লেখা।

হে আপুনি

হায়েনাদের নিক্ষিপ্ত অগ্নিবাণের দুঃসহ যন্ত্রণায় জর্জরিত হয়েছে আপনার সারা দেহ।

আপনার অসহ্য শারীরিক ও মানুষিক যন্ত্রণার অবসান করেছিল মৃত্যু এসে।

কিন্তু আপনার এ মৃত্যু লাখো-কোটি মানুষের বিবেককে দিয়েছে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি।

এ মৃত্যু বিবেকবান সকল মানুষকে করেছে হায়েনাদের প্রতি ক্রোধান্বিত, ক্ষুব্ধ।

পাশাপাশি তাদের অন্তরকে করেছে বেদনায় ভারাক্রান্ত। আপনার এ মৃত্যু কাঁদিয়েছে সারা দেশকে।

হে আপুনি, আপনার এ বিদায় সারা দেশসহ পৃথিবীর মানুষকে করেছে তীব্র শোকাকুল। অনেকেই জানিয়েছে মাতৃবিয়োগের মতো শোকের বেদনায় নিমজ্জিত ছিলেন তারা।

তাদের অন্তরকে করেছে শূন্যতার হাহাকারে পরিপূর্ণ। আপনি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছেন আমাদের সাহসের আরেক নাম। বাংলাদেশের নিপীড়িত হাজারো অভাগীর কাছে হয়ে উঠেছেন বলিষ্ঠ প্রেরণা।

হে আপুনি, আপনার হত্যাকারীদের উদ্দেশ্যে দেশবাসী দিয়েছে অভিশপ্ত, আর করেছে তাদের মনের ঘৃণার উদগীরণ।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় রোগ পীড়িত শরীরেও অনেকেই এসেছে আপনার জন্মভূমিতে, আপনার অন্তিম শয়ানের স্থান সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়ায়।

আপনি প্রতিদিন যে পথে যেতেন আপনার বিদ্যাপীঠে, যে পথে ছিল আপনার চলাচল, বাড়ির আঙিনায় যেখানে নিত্য পড়ত আপনার পদচিহ্ন। সবাই হেঁটেছে সেসব পথে। যেন তারা খুঁজছে তাদের প্রিয় স্বজনকে। পেতে চেয়েছিল তারা আপনার স্মৃতির স্পর্শ।

হে আপুনি, আপনি এক আত্মবিশ্বাসী, সাহসী প্রতিবাদী নারী। এ কথা প্রধানমন্ত্রীসহ আখ্যায়িত করেছে সকলেই।

আপনি এ যুগের সুলতানা রাজিয়া, আপনি একালের বেগম রোকেয়া।

আপনার সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ কত কথা যে বলেছে আপনার সঙ্গে। বেদনার নীল রঙে আর প্রচণ্ড আবেগে আক্রান্ত হয়ে এক বুক শূন্যতার হাহাকার নিয়ে উত্তর চরচান্দিয়া ছেড়ে লাখো মানুষ ফিরে গেছে তাদের নিজ আবাসে। কিন্তু তারা আপনাকে একটুও ভুলেনি।

আপনি মানুষের মনে আছেন চির জাগরূক হয়ে। এ দেশের প্রতিবাদী নারীদের তালিকায় লেখা রবে আপনার নাম।

আপুনি,

আমার হাতটা কাঁপছে

আর লিখতে পারছি না।

আপনার অজস্র স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছি আমি।

মাথার ভেতর তোলপাড় করছে ঘটনাপ্রবাহ। ভেবে পাচ্ছি না কি লিখব। বোধহয় এই লেখাটিতে আপনাকে কোনো সম্ভাষণ জানাতে পারলাম না। কারণ আপনাকে কোনো সম্ভাষণে সম্ভাষিত করব আমি বুঝতে পারছি না। যাই করি না কেন, তা আপনার জন্য অতিনগণ্য হয়ে যাবে আপুনি।

আপনি বীরাঙ্গনার মতো জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন। আপনার এই আত্মদান, এই লড়াইকে দেশবাসী ব্যর্থ হতে দেয়নি। আপনার খুনিরা সর্বোচ্চ শাস্তির অপেক্ষায়।

প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন, আদালত, পিবিআই, গোয়েন্দা পুলিশ, সাংবাদিক এবং দলমত নির্বিশেষে সারা দেশ এই অপরাধের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে; জানি না আল্লাহর দরবারে সিজদায় পড়ে কতটুকু অশ্রু ঝরালে এবং কোন ভাষায় শোকরগোজার করলে এর যথাযথ শুকরিয়া আদায় হবে!

আপুনি, আপনার হত্যাকারীদের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।

আপনাকে পুড়িয়ে হত্যার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- আপনাকে বাঁচাতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য, আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তবে আপনার শেষ ইচ্ছার বাস্তবায়ন-খুনিদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বিচারালয়।

নিম্নআদালতের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে এ ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত চোখের জল নামিয়ে আপনার হত্যার বিচারের দাবিতে লাখো কণ্ঠের আওয়াজ বৃথা যায়নি।

আপুনি, আপনি অমর হয়ে থাকবেন চিরদিন। মাদ্রাসার সামনে আপনার প্রতিকৃতি গড়ে তাতে জনগণ আজীবন শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। মানব ইতিহাসে সংযোজিত হবে আরেকটি যুগান্তকারী অধ্যায়।

দেশ কাঁপানো প্রতিবাদী কন্যা হিসেবে আপনি আজ আখ্যায়িত। সমগ্র জাতিকে জাগিয়ে তুলে আজ আপনি চিরনিদ্রায় শায়িত। আপনার মতো হাজারো নুসরাতের সম্ভ্রম রক্ষা করতে আমরাও আজ প্রতিবাদী।

আপু, গত বছরের এই দিনে কখন যে আপনি

দুচোখ বন্ধ করেছিলেন বুঝতেই পারিনি।

আপনাকে আজ মনে পড়ে- এ কথা বলব না! বরং প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আপনাকে মনে পড়ে। আপনার অভাব আমি সবসময় অনুভব করি। আপনাকে নিয়ে কিছু লিখতে বসলে, চোখে অশ্রু ধরে রাখতে পারি না। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

একটি বছর কেটে গেল চোখের জল ও হৃদয়ের অবিশ্রান্ত রক্তক্ষরণে। আজও দুচোখে ভাসে আপনার শেষ দিনগুলোর নির্মম কষ্টের দৃশ্যটি। কতই বর্বর ও নিষ্ঠুর ছিল! সেই দিনই সব স্বপ্ন কাচের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

সেই দিন মনে হয়েছিল, আমি আপনাকে ছেড়ে হয়তো বাঁচব না। সেদিন আকাশ ভারী হয়েছিল, মা-বাবা ভাইয়ার আহাজারিতে, হাসপাতালের ফ্লোরে পা দিয়ে আঘাত করেছিলাম। নিজের চুল নিজে ছিঁড়েছিলাম। কিন্তু আপনি জেগে ওঠেননি, আর সাড়া দেননি।

আপুনি, আমি না খুব নিষ্ঠুর হয়ে বুকে পাথর বেঁধে এখনও আপনাকে ছাড়া বেঁচে আছি। আপনি প্রায়শ বলতেন, মরে গেলে দেখবি আমাকে ছাড়া তোদের কী অবস্থা হয়? দেখছেন ত এইবার তা হলে ফিরে আসুন আপু। জানি আপনি আর ফিরে আসবেন না।

অকারণে তবু কেন আপনাকে কাছে ডাকি! আপনাকে আবারও ফিরে পাওয়ার সব যুক্তির কাছে যখন আমি হেরে যাই, তখন একটা আর্তনাদ ও অশ্রু ছাড়া আর কিছুই থাকে না।

আপনি নেই আমাদের মাঝে অনুভব করতেই দম বন্ধ হয়ে আসে। আপনার মায়াভরা স্পর্শের ভালোবাসাটুকু পেতে দিবারাত্রিতে আমার বুকের গহিন উপকূল কেমন যেন পুড়ে পুড়ে যায়।

মৃত্যুর যন্ত্রণা কত কঠিন, তা আপনাকে দেখেই বুঝেছি। আপনাকে হারানোর শোকটা কতটা কষ্টের তা পৃথিবীর কাউকে বোঝাতে পারব না।

যোগ্যতার বিচারে ফ্যামিলির সবার চেয়ে আপনি মেধাবী ও অনন্য। এভাবেই আপনি চিরবিদায় নেবেন তা একেবারেই কল্পনাতীত।

এখনও ঘুমের ঘরে জেগে উঠি আপনার শেষ দিনগুলোর নির্মম কষ্টের কথা স্বপ্নে দেখে। স্বপ্নেই জেগে থাকবেন আপনি আমার মাঝে আজীবন, আপনার স্মৃতিভার আমি বয়ে যাব সারা জীবন।

শেষ রাতে চোখে এক ফোঁটা ঘুম আসে না আপনার কথা ভেবে।

জানো আপুনি, এখন আমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি।

নিজের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক অমিল তা এখন বুঝতে পারছি। চারদিকে অজস্র মিথ্যার ভিড়ে একটা সত্যের পেছনে ছুটছি নিরন্তর।

পৃথিবীতে এত মানুষ কিন্তু একজন মানুষই মিলে না, যে কিনা আমাকে একটু অকৃত্রিম ভালোবাসা উপহার দেবে! আপু, ঠিক তখনই আপনার কথা মনে পড়ে আমার।

আপুনি, আপনি আমার অস্তিত্বে মিশে আছেন। কত কত আনন্দের মুহূর্তে অবিচল থেকে আপনি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতেন ভবিষ্যতের কথা।

মাঝেমধ্যে আপনি যখন আমার ওপর রেগে যেতেন, তখন বুঝতে পারতাম না যে আপনার ওই সাময়িক রাগের ভেতরেও যে পরিমাণ ভালোবাসা লুকায়িত ছিল, পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা জড়ো করলেও তার সমতুল্য হতে পারে না। আপনার অকৃত্রিম ভালোবাসা আমার কাছে অতুলনীয়।

আপনার সঙ্গে পথ চলার সময়গুলোকে খুব অনুভব করছি। জীবন চলার পথে আপনার স্নেহের পরশেই বড় হয়েছি। এ ঋণ আমি মেটাব কীভাবে!

আপনিবিহীন প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল বিষাদময়, প্রতিটি একাকীত্ব সময় ছিল হাহাকার ও অশ্রুসিক্তে ভরা। প্রতিটি রাত ছিল নির্ঘুম ও আপনাকে কাছে না পাওয়ার অতৃপ্ত যন্তণার!

আপনার ভালোবাসা, আপনার স্নেহ, আপনার আদর আজও আমার স্মৃতিতে সতেজ হয়ে ভাসে।

সারাজীবন আপনাকে মিস করব আপুনি। আপনার কথা মনে পড়লে এখনও চোখে পানি চলে আসে।

আপুনি, আমি স্বর্গ দেখিনি। তবে আপনাকে পেয়ে স্বর্গকে আমি পেয়েছি, যা আজ আমি হারিয়ে ফেলেছি। প্রতিদিন কিছুটা হলেও ভালো কাজ করার চেষ্টা করি আপনার আত্মার শান্তি কামনা করে।

আপনার হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হাইকোর্টে বহাল থেকে দ্রুত যেমন কার্যকর হওয়া চাই, তেমনি আপনার মতো লাখো নুসরাতের নিরাপদ ও সুস্থ জীবন কামনা করি।

একজন প্রতিবাদীর মৃত্যুতে যেন বিশ্ব লিখে– ‘আমাদের চোখের জল ঝরিয়ে, নুসরাত তুমি কীভাবে চলে গেলে মাটির নিকষ অন্ধকারে?

গতরাত ছিল পবিত্র শবেবরাতের রাত। আমার বোনের আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এই দুর্যোগময় সময় প্রার্থনা করি স্রষ্টার সকল সৃষ্টি ভালো থাকুক… করোনার মহামারী থেকে আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে নিরাপদে রাখুক।

আর আজকে আমার আপুর এই বিদায়ের দিনে-বেদনার দিনে দেশবাসী সকলের নিকট আমার আপুর জন্য আন্তরিক দোয়া কামনা করছি। মহান আল্লাহ্ যেন আমার আপুর সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে, তার কবরের জীবন ও পরকালের জীবন শান্তিময় করেন। আমিন…।

রায়হান

শহীদা নুসরাতের ছোট ভাই।’

প্রসঙ্গত ফেনী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গত বছরের ২৬ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় গত ২৭ মার্চ পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে।

সিরাজউদ্দৌলার নির্দেশে মাকসুদ কমিশনার, সাহাদাত হোসেন শামীম তাদের অনুসারীদের নিয়ে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে সোনাগাজী বাজারে মানববন্ধন করে এবং থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করে।

একই সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার অনুসারীরা নুসরাতকে মামলাটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু নুসরাত মামলা উঠিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরে ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান।

পর দিন ১১ এপ্রিল বিকালে সোনাগাজীতে জানাজা শেষে নুসরাতকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল নুসরাতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে সেটি হত্যা মামলায় রুপ নেয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply