করোনা চিকিৎসার বেহাল দশা, স্বাস্থকর্মীদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই

|

রাসেল আহমেদ, সিনিয়র রিপোর্টার:

করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এখনো হয়নি এন-৯৫ মাস্কের ব্যবস্থা। চিকিৎসা শেষে নেই আবাসন ও খাবার দাবারের নিশ্চয়তা। শুধু তাই না, অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি অন্য বিভাগ থেকেও সহায়তা পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। কোভিড-১৯ চিকিৎসার বেহাল দশা অন্য হাসপাতালগুলোতেও। এখনো নেই চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক। রোগী শনাক্তের পর প্রায় দেড় মাসেও চিকিৎসার এই বেহাল দশার সমালোচনা বিশেষজ্ঞদের। রোগীর সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যু ও সারাদেশে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের করোনা শনাক্তের পর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও বেশি আলোচিত হচ্ছে।

গত জানুয়ারিতেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় চীনে। এরপর অন্য দেশগুলোতেও কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে প্রস্তুতির প্রসঙ্গ আসে বাংলাদেশেও। তবে শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেয়া আছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তবে বাস্তবতা হলো এপ্রিল মাসেও সুশৃঙ্খল চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বাংলাদেশে। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেই নেই পর্যাপ্ত এন-৯৫ মাস্ক। হাসপাতালের আইসিইউ চলছে জোড়াতালিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, চিকিৎসা শেষে পরিবারের নিরাপত্তার খাতিরে বাসায় ফিরতে পারছেন না। সরকারি গেস্ট হাউসেও জায়গা হয়নি তাদের। করোনার চিকিৎসক শুনলে পালিয়ে যায় সবাই।

অবশেষে বেসরকারি দুটি হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা হলেও খাবার সংকট কাটেনি। স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন শুনেই পালিয়ে যায় হোটেলের বাবুর্চি। পরে আরেকজনের মাধ্যমে একটি হোটেলে খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে অন্য হোটেলের সংকট কাটেনি। কুয়েত মৈত্রীর অপর একজন চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, সারাদিন কাজ করার পর আমার স্টাফরা যদি ঠিক মতো খেতেও না পারে তবে কীভাবে তারা সেবা করবে বলেন। আর পিপিই ও মাস্ক এর কথা কি বলবো। অনেক বলাবলি ও তদবিরের পর কিছু পিপিই পাওয়া গেছে। তবে এন-৯৫ মাস্ক নেই বললেই চলে।

করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য হাসপাতালগুলোর অবস্থাও এমন। ডাব্লিউএইচও নির্ধারিত মাস্ক নেই। অন্যান্য পিপিই উপকরণেও ঘাটতি কমেনি। চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের আলাদা আবাসন সুবিধাতো দূরের কথা। যমুনা নিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের সেবা দেয়া চিকিৎসকরা।

রাজধানীর আরেকটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন কথা হয় এমন এক চিকিৎসকের সাথে। তিনি বলেন, আমার বাসায় তিনটা রুম। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানকে দুটি কক্ষে রেখে নিজে আলাদা একটা রুমে থাকি বন্দির মতো। সবসময় আতঙ্কে থাকি। কখন আমার সন্তান না করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে যেসব সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয় বাস্তবে তার অধিকাংশই নেই। আমার থাকার ব্যবস্থা দূরে থাক, সকালে দুপুরে যে খাব তারও কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। শুনেছি পর্যটন করপোরেশন থেকে খাবারের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু আজ পর্যন্ততো দেখলাম না। কিছুক্ষণ আগে রাউন্ডে গেলাম একটা পূর্ণাঙ্গ পিপিই পেলাম না। এখান থেকে একটা ওখান থেকে একটা করে বের হলাম তাও নরমাল মাস্ক নিয়ে। অথচ আমি সরাসরি কোভিড পজিটিভ রোগীদের দেখাশোনা করি। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমরা কীভাবে যুদ্ধ করবো। সরকার আমাদের জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কোনো সমন্বয় নেই।

চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন পরিস্থিতিতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কড়া সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, সমস্যা বিশ্বব্যাপী। তবে প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও এতটা খারাপ পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যজনক। এখানে সমন্বয়ের বড় ঘাটতি আছে। পরিকল্পিত কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

রোগী শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলক কম বাংলাদেশে। তবে পরীক্ষা বাড়ানো হলে এই সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করতে না পারলে ভায়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply