স্টাফ রিপোর্টার,মানিকগঞ্জ:
করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে অনেক স্থানে। এমনকি লাশ বহনে খাটিয়াও দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য জমি দিলেন মানিকগঞ্জের সন্তান সিআইডির সিনিয়র এএসপি এনায়েত করিম রাসেল। বেওয়ারিশ লাশ আর গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের দাফনের জন্যই এই জমি কিনেছিলেন তিনি।
বর্তমানে করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে বিভিন্নস্থানে লাশ দাফনে বাধা দেয়ার ঘটনা দেখে রাসেল এই সিদ্ধান্ত নেন। দেশের যে কোন জায়গা থেকে এই কবরস্থানে লাশ দাফনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বেওয়ারিশ লাশ এবং স্থানীয়দের মরদেহও দাফন করা হবে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন উদ্যোগ মানবিকতার বড় উদাহরণ হিসাবে দেখছেন স্থানীয়রা।
করোনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশ দাফনের এই উদ্যোগের ঘোষণা রাসেল তার ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়েছেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে রাসেল বলেন, মানিকগঞ্জে বাসা/ মানিকগঞ্জে বাসা কিন্তু বসবাস অন্য জায়গায় বা বাংলাদেশের যে কেউ আল্লাহ না করুক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে বিনাসংকোচে নিয়ে আসুন গংগাধরপট্টি চকে উত্তর-পুর্বকোণে(নওখন্ডা)আমাদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে। আশেপাশে কোন জনবসতিও নেই। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এখানে কবর দেয়া সবার জন্য উন্মুক্ত।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক অথবা মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।পাশাপাশি নিজের মোবাইল নম্বর(০১৭৩০৩৩৬২২৩), ও তিন বন্ধু ডিএফএম লোটাস(০১৭৭৭৩০৫০১৬) ও শুভ(০১৭১২২৯২৯২২), মোস্তফা(০১৭১২৫৫৭০৮৬) যে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেছেন।তার এই উদ্যোগের বিষয়টি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র এবং পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছেন রাসেল।
এনায়েত করিম রাসেল মানিকগঞ্জের প্রয়াত সাংবাদিক লিয়াকত আলীর ছেলে। তার বাবা মোঃ লিয়াকত আলী বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
নিজের এই উদ্যোগের প্রসঙ্গে এএসপি এনায়েত করিম রাসেল বলেন,নিজ গ্রাম মানিকগঞ্জ পৌরসভার নওখন্ডা এলাকায় গত বছর ১০ শতাংশ জমি কিনেন তিনি। উদ্দেশ্য গ্রামের একটি কবরস্থান তৈরি করা। যেখানে স্থানীদের মৃতদেহ দাফনের পাশাপাশি বেওয়ারিশদের লাশও দাফন করা হবে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনায় দেশ আক্রান্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় লাশ দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনকি লাশ বহনের জন্য খাটিয়াও দেয়া হচ্ছে না। এটা দেখে তার অনেক কষ্ট লাগে। পরে সিদ্ধান্ত নেন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পাশাপাশি এখানে করোনায় মৃতদের লাশও দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে লাশ বহনের জন্য একটি খাটিয়ারও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তবে এই কবরস্থানে এখনো কোন লাশ দাফন করা হয়নি।
রাসেল আরও জানান, ১০ শতাংশ জমিতে কবরস্থানের কার্যক্রম শুরু হলেও, আশেপাশের কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে ভবিষ্যৎ এ জমির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস.এম ফেরদৌস জানান, পুলিশ অফিসার রাসেলের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। যা মানবিকতার বড় উদাহরণ।
তিনি বলেন, মৃতদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তারপরও কোথাও সমস্যা হলে এবং কেউ স্বেচ্ছায় দাফন করতে চাইলে এই জায়গায় দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a reply