কিভাবে পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস, জানালেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

|

অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে আদা জল খেয়ে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা। এরইমধ্যে ভাইরাসের শিকারে পরিণত হয়েছে বিশ্বজুড়ে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। দু লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে এর চরিত্র, বৈশিষ্ট নখদর্পণে নিতে হবে ।

আর সেই গবেষণায় ব্যস্ত রয়েছেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বাঙালি বিজ্ঞানী নিধানকুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার।

ইতিমধ্যে তারা করোনাভাইরাসের এখনও পর্যন্ত ১১টি ধরন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পাশাপাশি তারা জানতে পেরেছেন, এই ১১টি ধরনের মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়।

সোমবার ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ এই দুই বিজ্ঞানীর এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩ হাজার ৬৩৬ জন করোনা-রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস-নমুনা সংগ্রহ করে তাদের আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানী নিধান ও পার্থপ্রতিম।

প্রায় ৪ হাজার নমুনায় ১১ ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান পান তারা। এই ১১ ধরন কোন কোন দেশে সংক্রমিত হয়েছে তার তালিকাও তৈরি করেছেন তারা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন, ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির গঠনে। একেক দেশে একেক চেহারায় সংক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত ‘ও’, ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এথ্রি’, ‘বি’, ‘বি১’-সহ মোট ১১ ধরনের ভাইরাস মিলেছে। এর মধ্যে উহানে প্রথম সংক্রমণ ঘটায় ‘ও’। বাকি ১০টি সময় ও পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে থেকে পরিবর্তিত হয়েছে ‘ও’ টাইপ থেকে।

পার্থপ্রতিম বলেন, এদের মধ্যে ‘এ২এ’ টাইপটির সংক্রমণ ক্ষমতা এখন সবচেয়ে বেশি। এই ভাইরাসে মারাও পড়ছে বেশি মানুষ। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত নমুনায় সবচেয়ে ‘এ২এ’ করোনাভাইরাসকে পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ২৪ জানুয়ারিতে নিজেকে বদলে ‘এ২এ’ টাইপ ধারণ করে করোনাভাইরাস। এরপর মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের ৬০ শতাংশ দেশে সংক্রমণ ছড়ায় এটি।

ইতালি ও যুক্তরাজ্যফেরত আক্রান্ত নাগরিকদের থেকে ভারতেও ‘এ২এ’ টাইপ এর বিস্তার ঘটিয়েছে বলে জানান এ দুই বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞানী নিধানকুমার জানান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ‘এ২এ’ ছাড়াও চীন থেকে আসা ‘ও’ টাইপ এবং ইরান থেকে ‘এথ্রি’ বিস্তার লাভ করেছে।

দুই বিজ্ঞানীই জানাচ্ছেন, ভাইরাসটি এই চার মাসে নিজের এতোই পরিবর্তন এনেছে যে, এর প্রতিষেধক তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ১১ ধরনের করোনাকে পুরোপুরি জানতে না-পারলে প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ তা করবে না। কারণ ওই প্রতিষেধক দিয়ে হয়ত ‘ও’ টাইপকে ধ্বংস করা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু যে রোগোর শরীরে ‘এ২এ’ বা ‘এথ্রি’ রয়েছে তার বেলায় এটি সেভাবে কাজ করবে না।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply