করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সফল হলো ভিয়েতনাম

|

করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সফল হলো ভিয়েতনাম

করোনা মোকাবেলায় যেভাবে সফল হলো ভিয়েতনাম

চীনে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাস বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। উন্নয়নশীল দেশ ভিয়েতনামের বিশাল সীমান্তজুড়ে রয়েছে চীন। ভিয়েতনামের জনসংখ্যা নয় কোটি ৭০ লাখ। অথচ সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র তিনশোর কিছু বেশি এবং মৃতের সংখ্যা শূন্য। ইতোমধ্যেই লকডাউনের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসছে দেশটি। সবকিছু খুলতে শুরু করেছে। খবর বিবিসির।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে এখনও সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ভিয়েতনাম। শুরুতে করোনা সংক্রমণের হার যখন কম ছিল তখন তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। তবে এর জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে দেশটিকে, মূল্যও দিতে হয়েছে এবং যে ধরনের কঠোর পদক্ষেপ তারা নিয়েছিল, তার নেতিবাচক দিকও ছিল।

ভিয়েতনামে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক অংশীদার সংস্থার ড. টড পোলাক বলেন, এ ধরনের অজানা ও সম্ভাব্য বিপদজনক একটা জীবাণুর বিরুদ্ধে আপনি লড়াইয়ে নেমেছেন, তখন বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়া অনেক সময় ভালো।

তিনি আরও বলেন, এই ভাইরাস স্বল্প পরিসরে ছড়ালেও দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে জেনে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ শুরুতেই করোনা মকাবেলায় ব্যাপক পরিসরে উদ্যোগ নেয়।

জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও রোগ শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার “কঠোর পদক্ষেপ” নেয়া শুরু করে। রহস্যময় নতুন এই রোগে তখন উহানে মারা গেছে মাত্র দু’জন। সেই পর্যায়ে তাদের প্রস্তুতির শুরু। জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে সেখানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়, যখন উহান থেকে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে দেখতে হো চি মিন সিটিতে যান। ভিয়েতনাম তখন থেকেই শুরু করে দেয় তার জরুরি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

হো চি মিন সিটিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক গাই থোয়েটস্ যিনি কাজ করেন সরকারের সংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচিতে। তিনি বলেছিলেন, শুরুর এই পদক্ষেপ দেখে মনে হয়েছিল বেশি বাড়াবাড়ি, কিন্তু পরে দেখা গেছে সেটা সুবিবেচনার কাজই ছিল।

এছাড়া ভিয়েতনাম এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়, যা অন্যান্য দেশের নিতে সময় লেগে যায় কয়েকমাস। তারা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনে, চীনের সাথে সীমান্ত এলাকায় পর্যবেক্ষণ কঠোর করে এবং কিছুদিনের মধ্যে সীমান্ত পথে চলাচল পুরো বন্ধ করে দেয়। সীমান্ত এবং অন্যান্য নাজুক জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয়। এদিকে জানুয়ারির শেষে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে স্কুলগুলো বন্ধই ছিল। তখনই স্কুলের ছুটি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে তা খুঁজে বের করতে ব্যাপক জনশক্তি নিয়োগ করে। এতে প্রচুর অর্থবল ব্যবহার করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিয়েতনাম সরকার এবং দেশটির মানুষ সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় অনেক অনেক বেশি অভ্যস্ত। বিশ্বের অন্যান্য ধনী দেশগুলোর তুলনায় তাদের অভিজ্ঞতা বেশি।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি এসে ভিয়েতনাম দেশটিতে ঢোকা প্রত্যেক মানুষকে এবং দেশের ভেতর পজেটিভ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। এর খরচের বেশিটাই বহন করে সরকার।

অধ্যাপক থোয়েটস্ বলেন, ব্যাপক পরিসরে মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এই সাফল্যের পেছনে একটা বড় কারণ। কেননা যত মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে তাদের অর্ধেকের রোগের লক্ষণ ছিল না, কিন্তু তাদের শরীরে ভাইরাস ছিল।

এছাড়া, কোয়ারেন্টাইনে যাদের নেয়া হয়েছিল, তাদের সবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষা করা না হলে ভিয়েতনামে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত রোগীদের শতকরা ৪০ ভাগ জানতো না যে তাদের শরীরে ভাইরাস রয়েছে।

জীবাণুবহনকারী রোগীদের যদি আটকে রাখা না হতো, তাহলে এরা বাইরে ঘুরে বেড়াতো এবং অন্যদের সংক্রমিত করতো। মোদ্দা কথা, ব্যাপক দ্রুততম সময়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ায় দেশটিতে একজনও মারা যায়নি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply