কীভাবে, কেন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়?

|

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) হলো গ্রীষ্মমন্ডলী ঝড় বা বায়ুমন্ডলীয় একটি উত্তাল অবস্থা যা বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের একটি। পৃথিবীর ৩০º উত্তর এবং ৩০º দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে গড়ে ৮০টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।

কীভাবে, কেন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়?
মূলত নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝড়কে ঘূর্ণিঝড় বলে। সাধারণত সমুদ্রের জলের উপরিভাগের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে নিম্নচাপ তৈরি হয়। তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকে, সমুদ্রের জল তত বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভূত হয়ে তা উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফলে একটা শূণ্যস্থানের সৃষ্টি হয়। চাপের সমতা রক্ষার জন্য আশেপাশের উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু সেই শূণ্যস্থানের দিকে ছুটে আসে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসা এই দ্রুত ও ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বলে।

এদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট করিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এ জন্য আমরা দেখি, উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও করিওলিস শক্তি ন্যূনতম থাকায়, নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রকারভেদ:

ঘূর্ণিঝড় মূলত দু’ধরণের হয়। ১) ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়, ২) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়।

নিরক্ষরেখার ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিণে যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বলে। বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় হলো এই ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ও শক্তি নতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের থেকে বেশি হয়ে থাকে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ অনুযায়ী এর পাঁচটি ভাগ রয়েছে:

ট্রপিক্যাল সাইক্লোন: ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তাকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলে।

সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: যখন ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়।

ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: এ ক্ষেত্রে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার হয়।

এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম: যখন ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার হয়।

সুপার সাইক্লোন: ঝড়ের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি হলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply