মাস্ক ব্যবহারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যায়

|

করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্রস্থলগুলোয় মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় হাজার হাজার সংক্রমণ রোধ সম্ভব হয়েছে বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বাসায় থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাস্ক পরিধান করা।

গবেষকরা জানান, ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে মাস্ক ব্যবহারে করোনা সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ কমে যায়। জার্মানির একটি শহরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পর শহরটি পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা এমন ধারণা পেয়েছেন।

জার্মানির বনভিত্তিক ইন্সটিটিউট অব লেবার ইকোনমিক্সের গবেষণা অনুসারে, ৬ এপ্রিল জেনা শহরে গণপরিবহন ও দোকানে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। ১ লাখ ৮ হাজার বাসিন্দার পৌরসভায় এরপর থেকে নতুন সংক্রমণ প্রায় কমে যায়। থুরিঞ্জিয়া রাজ্যের আশপাশ ও জার্মানির অন্যত্র মাস্ক ব্যবহারের নীতিমালা কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর গ্রহণ করা হয়। ওই এলাকাগুলোয় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকরা জেনা শহরের ৬ এপ্রিলের আগের ও পরের অবস্থা একই জন-তাত্ত্বিক শহরের সঙ্গে তুলনা করেন। ব্যাপক ভিত্তিতে মাস্ক ব্যবহারের প্রচলন জারি করার পর নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ শতাংশের কম ছিল। জার্মানির বড় শহরগুলোর সঙ্গে এ ব্যবধান আরও বেশি ছিল।

ইউনিভার্সিটি অব মেইঞ্জের ক্লস ওয়াল্ডেসহ গবেষকরা বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক একটি সাশ্রয়ী কার্যকর ব্যবস্থা। গবেষকরা বলছেন, অন্য দেশে বা ভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহারের কারণে ফলাফলে ভিন্নতা থাকতে পারে। তারা এ বিষয়ে আরও গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, তাদের গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের মাস্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারণ জার্মান সরকার কোনো নির্দিষ্ট মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়নি।

অপরদিকে, সম্প্রতি দ্য প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে (পিএনএএস) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ এপ্রিল উত্তর ইতালিতে এবং ১৭ এপ্রিল নিউইয়র্ক সিটিতে মাস্ক পরার নিয়ম জারির পর দুই শহরে সংক্রমণের প্রবণতা নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। নিউইয়র্কে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর নতুন সংক্রমণের হার প্রতিদিন ৩ শতাংশ করে হ্রাস পায়। কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অঞ্চলে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণ বাড়ছিল।

ইতালি ও নিউইয়র্কে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা আরোপের আগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন এবং হাতধোয়া বা স্যানিটাইজ করার নিয়মগুলো কার্যকর ছিল। এগুলো কেবল সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস করতে সহায়তা করে। কিন্তু মুখ ঢেকে থাকায় মাস্ক বায়ুবাহিত সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে। গবেষকরা জানান, ভাইরাস বহনকারী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা মুখের আচ্ছাদনের কারণে বাতাসে ছড়াতে বাধা পায় বলে সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এতে বোঝা যায়, করোনা সংক্রমণের প্রধান উপায় হল বায়ুবাহিত সংক্রমণ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply