৪৮ বছরের অভিনয় জীবন আলমগীরের

|

নায়ক আলমগীর, এক সময়ের দর্শক হৃদয়ে ঝড় তোলা এক অভিনেতা। পুরো নাম মহিউদ্দীন আহমেদ আলমগীর। আগাগোড়াই সিনেমার মানুষ। এ মাধ্যমকে ভালোবেসেই কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪৮ বছর। পাঁচ দশকের দ্বারপ্রান্তে তার সিনেমা ক্যারিয়ার। পেশাদার অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত সিনেমাসহ সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদেও পাশে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য কখনও তিনি হয়ে উঠেছেন মহানায়ক, কখনও অভিভাবক, আবার কখনও একজন সুপারস্টার। অথচ বিশেষণগুলো তাকে খুব বেশি পুলকিত করে না। কারণ তিনি বরাবরই একজন অভিনেতা হয়ে থাকতে চেয়েছেন; আছেনও।

অভিনয় জীবনের দীর্ঘ এ পথচলা এবং অভিনেতা হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে আলমগীর বলেন, ‘অভিনয় সম্পর্কে মূল্যায়ন করার মতো অভিনেতা আমি নই। অভিনয়ের ব্যাপ্তি এত বিশাল যার শেষ দেখা একজনমে সম্ভব নয়। অনেকেই আমাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করেন; কিন্তু আমি সবসময়ই একজন অভিনেতা হওয়ারই চেষ্টা করেছি। আমার আজকের অবস্থানের নেপথ্যে অবশ্যই আমার প্রথম সিনেমার পরিচালক যিনি আমাকে আবিষ্কার করেছেন শ্রদ্ধেয় আলমগীর কুমকুম ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এমনভাবে নায়ক হতে শিখিয়েছেন যেন আমি আকাশে উড়ে না যাই, যে কারণে আমি এখনও মাটিতেই হাঁটি। আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি গুণী শ্রদ্ধেয় পরিচালক মোস্তফা মেহমুদ, কামাল আহমেদ, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, এজে মিন্টু, কাজী হায়াৎ, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সাইফুল আজম কাশেম, মালেক আফসারীসহ আরও অনেকেই। তারা আমাকে হাতে ধরে শিখেয়েছেন অভিনয়। আমার সৌভাগ্য যে এমন গুণী পরিচালকদের সাহচর্যে থেকে অভিনয় শেখার সুযোগ পেয়েছি।’

কলেজ জীবনে নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার পথচলা শুরু হলেও ১৯৭২ সালের ২৪ জুন প্রয়াত বরেণ্য চিত্রপরিচালক আলমগীর কুমকুমের পরিচালনায় ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আলমগীর। পরবর্তী সময়ে একের পর এক সিনেমায় কাজ করে নিজেকে পরিপূর্ণ করে তোলার চেষ্টা করেন। এ পর্যন্ত আলমগীর ২২৫টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘মা ও ছেলে’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। পরবর্তী সময়ে আরও আটবার একই পুরস্কার অর্জন করেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা প্রযোজনা ও পরিচালনার অভিজ্ঞতাও আছে তার। তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা ‘ঝুমকা’। প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘নিষ্পাপ’। সর্বশেষ তিনি ‘একটি সিনেমার গল্প’ সিনেমাটি পরিচালনা করেন। এক সময় রাজধানীর গ্রিন রোডে একটি স্কুলে সৈয়দ আব্দুল হাদীর কাছে দু-তিন মাস গানও শিখেছিলেন। মোস্তফা মেহমুদের ‘মনিহার’ সিনেমায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সত্য সাহার সুর এবং সঙ্গীতে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত হন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply