চলে গেলেন দেশের প্রথম শহিদ মিনারের নকশাকার ডা. সাঈদ হায়দার

|

প্রথম শহিদ মিনারের নকশাকার ডা. সাঈদ হায়দার।

পাবনা প্রতিনিধি :

চলে গেলেন দেশের প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ও নকশাকার, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সংগ্রামী ডা. সাঈদ হায়দার। বুধবার বিকাল চারটায় ঢাকা উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন পাবনার এই কৃতি সন্তান (ইন্না লিল্লাহি………রাজিউন)।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। করোনা পজেটিভ হয়েছিলো তার। পরে করোনাকে জয় করলেও তার শরীরে দানা বাঁধে নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৬ বছর। তিনি ১ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতি নাতনি, আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

সাঈদ হায়দারের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ই ডিসেম্বর। পৈত্রিক নিবাস পাবনা শহরের সাধুপাড়ায় (রিভারভিউ)। পিতা সদর উদ্দিন আহমেদ, মাতা নেকজান নেছা। তিনি ১৯৪১ সালে ঝালকাঠি সরকারি হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৩ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

১৯৪৪ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রদের অপেক্ষমাণ তালিকায় নাম থাকায় প্রায় ১ বছর রসায়নে অনার্স নিয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমবিবিএস পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাকিস্তান চলে আসেন এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।

সাঈদ হায়দার ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে ৫২-র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। প্রথম শহিদ মিনার নির্মাণের নকশা তৈরি করেছিলেন তিনি এবং তার বন্ধু বদরুল আলম।

১৯৫৮ সালে তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। কর্মজীবন শুরু পশ্চিম পাকিস্তান হেলথ সার্ভিসে। পরবর্তীকালে পিআইডিসিতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ইপিআইডিসির চিফ মেডিকেল অফিসার হন, ১৯৮৩ সালে বিটিএমসি-র চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি বিএমএ, বাংলা একাডেমি, ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস রিহেবিলিটেশন সোসাইটি, প্রবীণ হিতৈষী সমিতি, জড়বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, সোসাইটি ফর অ্যাসিসটান্স টু হিয়ারিং অ্যামপ্রেয়ার্ড চিলড্রেন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য।

ডা. সাঈদ হায়দারের রচিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে ‘রোগ নিরাময় সুস্থ জীবন’, ‘লোকসমাজ চিকিৎসা বিজ্ঞান’, ‘পিছু ফিরে দেখা’, ‘সুন্দরী হতে হলে’, ‘নেশা সর্বনাশা’, ‘ওষুধ নিয়ে কথা’, ‘ইরাবতীর তীরে প্যাগোডার নীড়ে’, ‘দিল্লিতে পনেরো দিন: চিকিৎসা ও বেড়ানো’অন্যতম।

এছাড়া ‘প্রেসক্রাইবার্স গাইড’, ‘রশিদ খবির হায়দার-স টেক্সট বুক অব কম্যুনিটি মেডিসিন ও পাবলিক হেলথ’ প্রভৃতি গ্রন্থের সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাষা-আন্দোলনে অবদানের জন্য তিনি ২০১৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। গতকাল বাদ এশা নামাজে জানাজা শেষে ঢাকা উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পাবনার সুধীজনদের মাঝে।

ইউএইস/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply