বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ চাষে ঝুঁকছেন বাগেরহাটের খামারিরা

|

চোখ ধাঁধানো অন্য রকম ফুল ও লাল ফল ড্রাগন

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটেই এখন উৎপাদিত হচ্ছে বিদেশি ফল ড্রাগন। ভিয়েতনামের জাতীয় এ ফল মিষ্টি ও কিছুটা টক-মিষ্টি স্বাদের। এতে স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং প্রসাধণী গুণ থাকায় দিন দিন বাংলাদেশে এই ফলের চাহিদা বাড়ছে।

বাগেরহাট জেলার মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষে উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে ভিনদেশি ক্যাকটাস প্রজাতীর এই ফলের। করোনার মধ্যেও বাম্পার ফলন সেইসাথে বাম্পার দাম হওয়া সত্বেও ক্রেতা চাহিদা পুরন করতে পারছে না বলে জানান খামারিরা।

বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের পাশে বাগেরহাট উপজেলা সদর জেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের উৎকুল গ্রামে ২০ একর জমির উপরে ফজলুর রহমান বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করছেন ড্রাগন ফলের। গড়ে তুলেছেন বিশাল খামার। দূর থেকে দেখলে মনে হয় সযত্নে ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু পাশে যেতেই চোখ ধাঁধানো অন্য রকম ফুল ও এক লাল ফলে। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন।

ফজলুর রহমান জানান, মাত্র ১৬০টি চারা দিয়ে ২০১৫ সালে এ বাগানের তৈরি করেন তিনি। যেখানে এখন প্রায় ৮ হাজার গাছ রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিক্রি করেন গাছের চারা। এখন প্রতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ মণ। যা বাজারে পাইকারি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪শত টাকা থেকে ৭ শত টাকা দরে। আর প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

বাগেরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এটি লতানো কাটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্ব-পরাগায়িত ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়।

ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।

ড্রাগনচাষি ফজলুর রহমান আরও জানান, এবছর করোনার মধ্যে এতো পরিমাণ চাহিদা ক্রেতাদের যা আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, চাষাবাদও করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি)’র উপপরিচালক রঘুনাথ কর জানান, বাগেরহাট জেলায় অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষ করছে। বিদেশি এ ফল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্থানীয় বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ ফল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply