মুহুর্মুহু গুলি আর আগুনে থমথমে খুলনার মশিয়ালী গ্রাম

|

বৃহস্পতিবার রাতে জাকারিয়া ভাইদের গুলির ঘটনার পর গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে জাকারিয়াদের বাড়িসহ তার সব ভাই ও আত্মীয়দের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

আধিপত্য বিস্তার ও স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে খুলনার খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী এলাকা এখন আতঙ্কের নগরীতে রূপ নিয়েছে। গোটা এলাকা পুরুষ শূণ্য। ঘটনার নেপথ্যে থাকা তিন সহোদরের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী।

তিন সহোদর ও তাদের গুলিতে তিনজন নিহত ও কমপক্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অপরদিকে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে এক হামলাকারী নিহত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে অভিযুক্ত জাকারিয়াকে। তবে ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

জানা যায়, খুলনার মশিয়াখালীর জাকারিয়ার বাড়িতে থেকে মূলত গোটা এলাকায় অস্ত্রভাড়া, মাদক ব্যবসা, নিরীহ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনসহ ত্রাসের রাজত্ব পরিচালনা করতো তিন সহোদর জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টন। তাদের মতের অমিল ঘটলে নেমে আসতো সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন। একাধিক হত্যাসহ অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজীর মামলা রয়েছে তিন ভাইয়ের নামে।

বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বসতভিটা, গাড়ি ও ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। ওইদিন দুপুরে মূলত ঘটনার সূত্রপাত। এলাকায় আধিপত্য ও স্থানীয় একটি মসজিদ পরিচালনা পর্ষদে তাদের তিন ভাইকে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষমতার প্রভাব দেখায় তারা। মুজিবর নামে একজনকে অস্ত্রসহ পুলিশে ধরিয়ে দিলে তখন থেকেই ক্ষোভে ফেঠে পড়েন গ্রামবাসী।

সন্ধ্যায় নিরীহ গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর মূহর্মূহ গুলি চালায় তিনভাই। ঘটনাস্থলে নজরুল শেখ ও গোলাম রসুল এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাইফুল নামে আরও একজন মারা যানয়। গুলিবিদ্ধ হন আরও সাতজন।

এর পরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে হামলা চালায় মশিয়ালীর জাকারিয়ার ওই অভিশপ্ত বাড়িতে। ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় তিন ভাইয়ের দৃশ্যমান সকল সম্পদ। পাল্টা হামলাও চালানো হয় গ্রামবাসীর ওপর। এক পর্যায়ে পিছু হটে তারা। তিনভাইয়ের অপরাধ ও নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

গ্রামবাসী জানিয়েছে, তিনভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা এলাকায় বিচরণ করতো। ঘটনার পর জাকারিয়াকে খানাজাহান আলী থানা কমিটি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে আগেই ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিস্কার করা হয় তার জাফরিনকে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রবিউল ইসলাম জানান, দোষীদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এসময় গ্রামবাসী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তিনভাইকে গ্রেফতার ও তাদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানায়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply