ঢাকা টেস্টের ইতিবৃত্ত: ২৩ রানে শেষ ৬ উইকেট

|

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সফরকারী শ্রীলংকার বিপক্ষে ২১৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৩৩৯ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো ব্যাটসম্যান থিতু হতে পারেননি স্পিন সহায়ক ওই পিচে।

শনিবার মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ দলের শেষ ৬ উইকেটের পতন ঘটেছে মাত্র ২৩ রানে। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন আগের ম্যাচে একই টেস্টে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ শতক হাকানো ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। তিনি এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।

তবে প্রথম ইনিংসের উইকেট যে হারে পড়েছিল, সে তুলনায় দ্বিতীয় ইনিংসে পতনের হারটা তুলনামূলক ভালো বলা যেতে পারে! বিশ্বাস হচ্ছে না? না হবারই কথা।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটেছিল মাত্র ৩ রানে। ওই ইনিংসে দলে পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। তিনি অপরাজিত ৩৮ রান করেন।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১১০ রানে। ২০০৩ সালের পর নিজেদের মাটিতে এটি টাইগারদের সবচেয়ে কম রান।

এদিকে প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামানোর পাশাপাশ বাহাতি বোলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেটের মালিক হয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ। তিনি পেছনে ফেলেছেন ‘সুলতান অব সুইং’ খ্যাত ওয়াসিম আকরামকে।

হেরাথের পাশাপাশি ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামানো অপর লংকান বোলার হলেন আকিলা দনঞ্জয়। অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই তিনি তুলে নিলেন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে তিনি পেয়েছিলেন ৩টি উইকেট।

যাই হোক, ঘটনা বহুল এই টেস্ট ম্যাচের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও পুরো ম্যাচের স্কোরবোর্ডে এক নজরে দেখে নিন।

ঢাকা টেস্টের উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

বাংলাদেশ

  • দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ।
  • দুই ইনিংসের কোনোটিতে কোনো ব্যাটসম্যান ৫০ রান করতে পারেননি। মিরাজ প্রথম ইনিংসে অপরাজিত সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন ।
  • উভয় ইনিংসেই মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান ১০ রানের বেশি করতে পেরেছেন।
  • হঠাৎ দলে জায়গা পাওয়া সাব্বির রহমান প্রথম ইনিংসে তিন বলেন শূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে দুই বলে এক রান করেন।
  • উভয় ইনিংসে ৪টি করে মোট ৮টি উইকেট পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
  • দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৬ উইকেটের পতন মাত্র ২৩ রানে।
  • বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১০ রান সংগ্রহ করেছে। ২০০৩ সালের পর দেশের মাঠে এত কম রানে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ।
  • বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসে শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটে মাত্র ৩ রানে।
  • চার বছর পর দলে ফিরে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট পেয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী আব্দুল রাজ্জাক।
  • শ্রীলংকার প্রথম ইনিংসে উভয় প্রান্তে বাংলাদেশি স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আব্দুল রাজ্জাক বল করেছেন। এটি টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো ঘটনা। এর আগে ১৯৬৪ সালের এই ফেব্রুয়ারিতেই ভারতের জয়সিমহা ও দুরানি ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে কানপুর টেস্টে বল করেছিলেন।

শ্রীলংকা

  • বাহাতি বোলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ। তিনি পেছনে ফেলেছেন ‘সুলতান অব সুইং’ খ্যাত ওয়াসিম আকরামকে।
  • অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট পেয়েছেন আকিলা দনঞ্জয়। প্রথম ইনিংসে ৩টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টিসহ মোট ৮টি উইকেট পেয়েছেন তিনি।
  • উভয় ইনিংসে অর্ধ শতক হাকিয়েয়েছন রোশেন সিলভা। প্রথম ইনিংসে ৫৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৭০ রান করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

টস: শ্রীলংকা

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৯.৩ ওভারে ১২৩ (তামিম ২, ইমরুল ১৭, মুমিনুল ৩৩, মুশফিক ২৫, লিটন ১২, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১, মিরাজ ৭, রাজ্জাক ২, তাইজুল ৬, মুস্তাফিজ ৫*; লাকমল ৩-০-১১-০, দিলরুয়ান ১০-০-৩২-১, হেরাথ ১১.৩-১-৪৯-৪, আকিলা দনঞ্জয় ৫-১-২৪-৫)

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৭৩.৫ ওভারে ২২৬ (দিমুথ করুণারত্নে ৩২, কুশল মেন্ডিস ৭, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ২৮, ধানুশকা গুনাথিলকা ১৭, দিনেশ চান্ডিমাল ৩০, রোশেন সিলভা ৭০*, নিরোশান ডিকভেলা ১০, দিলরুবান পেরেরা ৭, আকিলা দনঞ্জয় ০, সুরঙ্গ লাকমাল ২১, রঙ্গনা হেরাথ ০; আব্দুর রাজ্জাক ১৭-২-৬০-১, মুস্তাফিজুর রহমান ১৭-৩-৪৯-৩, তাইজুল ইসলাম ১৯.৫-২-৭৬-৪, মেহেদী হাসান ২০-৫-৩৭-২)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৫.৪ ওভারে ১১০ (তামিম ৪, ইমরুল ১৯, মুমিনুল ০, মুশফিক ১, লিটন ২৫, মিরাজ ৩৮*, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাব্বির ০, রাজ্জাক ১, তাইজুল ১, মুস্তাফিজ ০; লাকমল ১২-৪-২৫-৩, দিলরুয়ান ১১.৪-৪-৩২-২, আকিলা দনঞ্জয় ১০-২-২০-৩, হেরাথ ১২-১-৩১-০)

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬৫.৩ ওভারে ২২২ (কুশল মেন্ডিস ৬৮, দিমুথ করুণারত্নে ৩, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ১৯, ধানুশকা গুনাথিলকা ১৩, দিনেশ চান্ডিমাল ০, রোশেন সিলভা ৫৬, নিরোশান ডিকভেলা ১, দিলরুবান পেরেরা ৩১, আকিলা দনঞ্জয় ২০, রঙ্গনা হেরাথ ২, সুরঙ্গ লাকমাল ৪*; মেহেদী হাসান ১৩-০-৫৪-০, আব্দুর রাজ্জাক  ১৬-২-৬৩-৪, তাইজুল ইসলাম ২৫.৩-২-৮৩-৪, মুস্তাফিজুর রহমান ১১-৪-১৭-২)

ফলাফল: শ্রীলংকা ২১৫ রানে জয়ী।

সিরিজ: ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে শ্রীলংকা

যমুনা অনলাইন: এফএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply