মধ্যাঞ্চলের ১৭ জেলায় বন্যার অবনতি

|

দুই দিনের বিরতি দিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে ফের শুরু হয়েছে ভারি বৃষ্টিপাত। এ কারণে দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি থমকে গেছে। উজান থেকে আবারও বানের পানি নেমে এসে অবনতি ঘটাতে পারে এই দুই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির।

অপরদিকে ভারি বৃষ্টিপাতে উজান থেকে আসা পানি মধ্যাঞ্চলে অন্তত ১৭ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রেখেছে।

গত তিন-চার দিন ধরে শুধু বালু নদ রাজধানীর ডেমরা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার নতুন করে মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ এবং টঙ্গীতে টঙ্গী খাল বিপৎসীমার উপরে চলে গেছে।

ফলে তিন দিক দিয়ে রাজধানী বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে মোট ৩২ জেলার ১৫৩ উপজেলা বন্যাকবলিত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে জোয়ারের কারণে সাগরে পানির স্তর বেড়ে গেছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি সাগরে নিষ্কাশন হ্রাস পেয়েছে। ফলে চলতি সপ্তাহে বন্যার পানি বিভিন্ন এলাকায় সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল হয়ে থাকতে পারে।

তবে ঈদুল আজহার পর নদ-নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাসের সম্ভাবনা আছে। এমন পরিস্থিতিতে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, চন্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় সাগরে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বেড়ে যায়।

এরপর যদি মৌসুম সক্রিয় থাকে তাহলে পানির স্তর আরও বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নদ-নদী থেকে সাগরের দিকে পানি কম যায় অথবা যেতে পারে না।

তিনি বলেন, বিপরীত দিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলে ও হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশীয় অঞ্চলে সোমবারই ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।

এর মধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এতে ৩০ জুলাইয়ের পর চতুর্থ দফায় বন্যা শুরু হতে পারে। সেই হিসাবে ব্রহ্মপুত্রে বন্যা আগস্টের ১০-১৪ তারিখের আগে শেষ হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতির মধ্যে আবার গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তুলনামূলক তীব্র হওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে ঢাকার আশপাশের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। রাজধানীর নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চল ১০-১২ দিনের জন্য বন্যাকবলিত থাকতে পারে।

এফএফডব্লিউসি জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমছে। এই ধারা ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। কিন্তু আগামী ৪৮-৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

গঙ্গা নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা থেকে নেমে আসা পানি জমছে পদ্মা অববাহিকায়। এতে মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের পরিস্থিতিও অবনতি ঘটাচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর এবং এফএফডব্লিউসি বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ৩১টি জেলা বন্যা উপদ্রুত এবং মোট ৩২টি বন্যাকবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে : কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী। এগুলোর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতি একই রকম থাকতে পারে।

সাধারণত একদিনে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা অন্তত ১০ দিন বন্যার সৃষ্টি করে। আবহাওয়া অধিদফতর এবং এফএফডব্লিউসির তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের অন্তত ৬টি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত সর্বোচ্চ ৮৫ মিলিমিটার থেকে ৫৮ মিলিমিটারের মধ্যে আছে।

ভারতের সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩ মিলিমিটার আর আসামের শিলচরে ৪৫ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ৩১ জুলাই পর্যন্ত দিন দিন বাড়তে থাকতে পারে।

এফএফডব্লিউসি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, পুনরায় ভারি বৃষ্টি এবং সাগরের জলের চাপের কারণে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানির সমতল ধীরগতিতে বাড়ছে ও বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করছে।

দেশের ভেতরে ও বাইরে চলতি সপ্তাহে অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। ফলে এই অববাহিকার পানি একইরকম থাকতে পারে। তাই নীলফামারী-কুড়িগ্রাম থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত ১৩ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। একই সময়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যা চলবে।

একই কারণে গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা অববাহিকার নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ বেড়ে দেশের পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ঘটাতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার নদ-নদীতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply