দেশে বাড়ছে নারীপ্রধান পরিবার

|

দেশে নারী ক্ষমতায়নের ভিত মজবুত হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। পরিবারেও বেড়েছে তাদের গুরুত্ব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নারী প্রধান পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের প্রধান হচ্ছেন নারী। অন্যদিকে পরিবার প্রধান হিসেবে কমছে পুরুষের হার। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষের সমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এটি তারই উদাহরণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসস্টিকস-২০১৯’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম মঙ্গলবার বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নতির সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটছে। সরকারের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে গত এক দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে নারীরা এখন অনেক বেশি তৎপর। ফলে পরিবারে নারীর গুরুত্বও বেড়েছে। তাদের পরামর্শ গ্রহণ করছেন পুরুষরা। তাছাড়া সন্তান লালন-পালন করা এবং নিয়মিত বাজার করাসহ পরিবারের বিভিন্ন দায়িত্ব এখন নারীরাই পালন করছেন। এভাবেই তারা একসময় পরিবার প্রধান হয়ে উঠছেন।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পরিবারগুলোর মধ্যে মহিলা প্রধান ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার। পরের বছর ২০১৬ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০১৭ সালের হিসাবে সেটি আরও বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ২ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জরিপে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশে।

এ প্রসঙ্গে এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক বলেন, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ১ কোটি মানুষ বিদেশে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই পরিবার রয়েছে দেশে। এসব পরিবারের মহিলারাই সব দায়দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তারা পরিবার প্রধান হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগ। এক্ষেত্রে অধিকাংশ পুরুষই নানা কাজে ব্যস্ত থাকছেন। ফলে পরিবারের সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীরা উপার্জনও করছেন। ফলে পরিবারে তাদের আধিপত্য ও গুরুত্ব বাড়ছে। তাছাড়া শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীরা ভূমিকা রাখছেন। ফলে দিনে দিনে মহিলা প্রধান পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী পরিবারগুলোর মধ্যে পুরুষ প্রধান পরিবার ছিল ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার। ২০১৬ সালের হিসাবে সেটি কমে হয়েছে ৮৭ দশমিক ২ শতাংশে। ২০১৭ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের হিসাবে এ হার আরও কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশে।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে স্থায়ী গণণাকারীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সুতরাং এ জরিপের ফলাফল অনেক বেশি সঠিক। বর্তমানের এ প্রতিবেদনটি ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। খানার (পরিবারের) সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮১০টি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply