থানায় নাড়াচাড়া করতে গিয়েই বিস্ফোরণ হয় পল্লবীর বোমা

|

মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র রিপোর্টার:

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা। রাজধানীর পল্লবী থানাধীন কালসী এলাকা থেকে আটক হয় রফিকুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও শহিদুল ইসলাম নামের ৩ যুবক।

পুলিশ বলছে, মিরপুরের শাহাদাত বাহিনী নামের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এরা। কয়েকদিন ধরে এলাকায় তাদের কার্যক্রম টের পেয়ে তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছিল পল্লবী থানার একটি টিম। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশী রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র পাওয়া যায়।

পল্লবীর থানার ভিতরে বিস্ফোরণের পরপরই উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিস্ফোরণের জন্য দায় ছিল পুলিশ সদস্যদেরই। তদন্তকারীরা জানান, রাত তিনটার পর থানায় আনা হয় আসামিদের। আসামিদের হাজতে রাখার পর আসামিরা স্বীকার করে এর ভেতর বিস্ফোরক আছে। এরপর থানা পুলিশ থেকে খবর দেয়া মিন্টো রোডের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটে। বোমা নিষ্ক্রিয় দলের প্রাথমিক টিম সেখানে রাত চারটার দিকে পৌঁছায়।

রাতে ডিউটিরত পল্লবী থানার এক উপ-পরিদর্শক জানান, বিস্ফোরক তেমন বড় কিছু না বলে মন্তব্য করেন বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের প্রথম দলটি। তবে তারা বলেন, এটা নিষ্ক্রিয় করতে হলে আরেকটি টিম লাগবে।

বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা যমুনা নিউজকে জানান, প্রাথমিক দলটি থানায় দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মিন্টো রোড থেকে আরেকটি টিম আসতে বলে। তারা যাওয়ার আগ মুহূর্তেই বিস্ফোরণ হয় বোমাটির। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য উপযুক্তভাবে রাখার কথা থাকলেও থানায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সেটি রাখেননি। উল্টো সেটা আসলেই বড় কিছু কিনা তা খালি হাতে নাড়াচড়া করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পল্লবী থানার ওসি অপারেশন ইমরানুলের কক্ষে এক পুলিশ সদস্য নিজ হাতে ওয়েট মেশিনটি টেবিলের উপর রাখেন। মুহূর্তে বিস্ফোরণ হয় বোমাটি। তছনছ হয়ে যায় কক্ষটি। পুড়ে যায় ভেতরে থাকা কাগজপত্র। ভেঙে যায় টেবিলটি।

কাউন্টার টেরোরিজমের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান যমুনা নিউজকে জানান, ওয়েট মেশিনের ভেতর পাইপের মধ্যে বসানো চারটি বোমা ছিল। এরমধ্যে একটির বিস্ফোরণ ঘটে। পরে দেখা যায়, বাকি তিনটার মধ্যে একটি অকার্যকর ও দুটি সচল। তখন বোমা নিষ্ক্রিয় দলের যারা পথে ছিল তারা দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর ওসি অপারেশন রুমের মধ্যেই তার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম যমুনা নিউজকে জানান, বোমাগুলো শক্তিশালী ছিল। চারটি বোমা একসাথে বিস্ফোরণ ঘটলে আরও বড় কোনো ঘটনা ঘটতে পারতো। বিস্ফোরকগুলো স্থানীয় সন্ত্রাসীদের। এটা কোনো জঙ্গি বা উগ্রপন্থীদের কাজ নয়।

এসব নিয়ে জানতে দিনভর মিরপুর বিভাগ ও পল্লবী থানা পুলিশের সাথে কথা বলতে ব্যর্থ হন গণমাধ্যম কর্মীরা। বারবার ফোন দেয়ার পরও কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেননি। সবশেষ বুধবার রাত ১১টার দিকে পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার জানান, থানার ভিতর বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মামলা দায়েরের পরপরই তা তদন্ত শুরু করবে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

বুধবার ভোরে থানা ভবনের দুইতলায় বিস্ফোরণে পুলিশের এক পরিদর্শকসহ আহত হন ৫ জন। এরমধ্যে একজন চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি দুজন ঢাকা মেডিকেল ভর্তি অন্য দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়।

ইউএইস/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply