১১৪৬ কিমি ঘুরেও ‘মিলল না’ জরুরি চিকিৎসা!

|

রোগীকে নিয়ে পেরোতে হয়েছে প্রায় ১১৪৬ কিলোমিটার রাস্তা। ঘুরতে হয়েছে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের অন্তত আটটি ওয়ার্ড। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াসহ খরচ হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করানো যায়নি। বরং কোভিড পজেটিভ-নেগেটিভের চক্রে ঘুরপাক খেয়েছেন। ভারতের শিলিগুড়ির আমবাড়ি থেকে কলকাতায় আসা পূর্ণিমা সরকার নামে ছেচল্লিশ বছরের এক ব্রেন টিউমারের রোগীর পরিবারের প্রায় দুই মাসের অভিজ্ঞতা এমনই। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

তার পরিবারের দাবি, দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন জানিয়ে এসএসকেএম হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি নিলেও পরের ৪৮ দিনে চিকিৎসার কিছুই হয়নি। শেষে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস থেকে কোভিড রোগী হিসেবে ওই মহিলাকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দশ দিন রাখার পরে মেডিকেল ওই রোগীকে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে ছুটি দিলেও বাঙুর ইনস্টিটিউট আর তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। দু’দিন হাসপাতাল চত্বরে রোগীকে ফেলে রাখার পরে শনিবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে নিয়ে শিলিগুড়ি ফিরে গিয়েছে পরিবার।

পূর্ণিমাদেবীর মেয়ে রিয়া বলেন, ‘শনিবার ঈদ আর রবিবারের ছুটির পরেও কবে মাকে ভর্তি নেয়া সম্ভব হবে তা বলা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় এসএসকেএম। যে হোটেলে এত দিন ছিলাম, সেখানকার মালিক মাকে করোনা রোগী ভেবে হোটেলে ঢুকতে দিতে রাজি হয়নি। সাথে থাকা টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া আর উপায় ছিল না।’

পূর্ণিমাদেবীর পরিবার জানায়, ১৯ জুন এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয় তাকে। তখন তার কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে সেখানে কয়েক জন রোগীর করোনা ধরা পড়ায় ৪ জুলাই অন্যদের সঙ্গে পূর্ণিমাদেবীকেও ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। কয়েক দিন তাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। ১৪ জুলাই এসএসকেএমের জরুরি বিভাগ থেকে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে তাকে পাঠানো হলে ভর্তি নেয়া হয়। ১৭ জুলাই সেখানেই তার অস্ত্রোপচারের দিন দেয়া হয়। ওই দিন সকালে পূর্ণিমাদেবীর পরিবারকে জানানো হয়, রোগীর করোনা পজেটিভ; তাকে মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে।

১৭ থেকে ৩১ জুলাই এই ১৪ দিন ভর্তি থাকার পরে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে পূর্ণিমাদেবীকে ছুটি দেয় মেডিকেল। কিন্তু সেই রিপোর্ট দেখেও বাঙুর ইনস্টিটিউট রোগীকে আর ভর্তি নিতে চায়নি বলে অভিযোগ রোগীর পরিবারের। তারা জানায়, ৩১ জুলাই শুক্রবার বাঙুর ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে গেলে বলা হয়, রোগী যে করোনা নেগেটিভ তা মেডিকেলের চিকিৎসককে দিয়ে লিখিয়ে আনতে হবে। সেই মতো ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে রোগী কোভিড নেগেটিভ লিখিয়ে নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘এই লেখায় হবে না। মেডিকেলের স্ট্যাম্প দিয়ে আনতে হবে।’ মেডিকেলের করোনা জোনের চার-পাঁচটি বিল্ডিং ঘুরে কোনও মতে স্ট্যাম্প করিয়ে নিয়ে গেলে বলা হয়, ‘বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে; শনিবার আসুন।’ শনিবার জানানো হয় ‘ঈদের জন্য বহির্বিভাগ বন্ধ। সামনের সপ্তাহে আসুন।’

রোগীর পরিবারের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে এসএসকেএমের সুপারের সঙ্গে কথা বললে, তিনিও মঙ্গলবারের আগে কিছুই করা সম্ভব নয় বলে জানান।

এসএসকেএমে সুপার রঘুনাথ মিশ্রের দাবি, ‘ওই রোগীর পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু বহির্বিভাগে দেখাতে বলা ছাড়া তাকে ভর্তি করানোর উপায় আমার ছিল না।’ একাধিকবার ঘুরানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেন ঘোরানো হয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply