সালিশে তিনবোনকে থুথু খাওয়ানোর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

|

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে অশ্লীল আচরণের অভিযােগ এনে একই পরিবারের তিনবোনকে থুথু খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত (১৫ আগস্ট) শনিবার সকালে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছাটকড়াইবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

বিচারের নামে গ্রামবাসীর সামনে নাকে খত দেবার পাশাপাশি ভুক্তভোগী তিনবোনকে জােড় করে থুথু খাওয়ানাের অভিযােগ উঠেছে। এক সপ্তাহ আগে ঘটনাটি ঘটলেও ভয় আর লোক লজ্জায় বিষয়টি গােপন রাখেন নির্যাতিতা পরিবার। পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকালে এসব কথা স্বীকার করেন নির্যাতিত পরিবার।

নির্যাতিত পরিবার অভিযােগ করেন, অকারণে হেডমাস্টার সাইফুল ইসলাম ওরফ সামিউল, মােকছেদ দেওয়ানী, আজাহার আলী বিচারের নামে আমাদের এভাবে হেনস্তা করেছেন। লজ্জায় ও অপমানে আমরা এখনো কারাে কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিই। থানায় অভিযোগ করার বিষয়ে তারা বলেন, আমরা অসহায় পরিবার। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলে। তাই তার বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করে টিকে থাকা সম্ভব না।

ভুক্তভোগী পরিবার ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু গ্রামবাসী জানান, যারা বিচার করেছে তারা প্রভাবশালী। গ্রামে ওদের দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

তারা আরও বলেন, গত ১৪ ( শুক্রবার) আগস্ট সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় দু’টি ছেলে নির্যাতিত অসহায় দিনমজুরের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময় এলাকার টাউট কিছু ছেলে তাদের আটক করে এবং ছেলে দুটির কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা আদায় করে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কানে গেলে ইউপি মেম্বারসহ কয়েকজনকে নিয়ে পরের দিন জহুরুল ইসলামের বাড়ির সামনে রাস্তায় সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে জিম্মি করে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে নেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল। সেই টাকা ইউপি মেম্বারসহ কয়েকজন ভাগ বাটোয়ারা করেন। পরে মেয়ে তিনজনকে অভিযুক্ত করে নাকে খত এবং থুথু খেতে বাধ্য করেন বিচারক সাইফুল ইসলাম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনায় সালিশ প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থেকে ওই মেয়েদের থুথু খেতে বাধ্য করেছেন। তবে সালিশ বিচারকদের অনেকবার বলেছিলাম আইন হাত নিয়েন না। এছাড়া টাকা নেবার বিষয় আমি কিছু জানি না।

এ ব্যাপার অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ঘটনার বিষয় স্বীকার করে বলেন, অপরাধ করেছে তাই তাদের থুথু খাওয়ানাে হয়েছে। তবে তাদের থুথু তারাই খেয়েছিল। তবে অপর অভিযুক্ত আজাহার আলী ও মােকছেদ দেওয়ানী জানান, ওই তিন মেয়েকে অভিযােগের ভিত্তিতে গ্রামের সকলের সামনে থুথু খাওয়ানাে হয়েছে। কারণ তারা অপরাধ করেছে তাই বিচার করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপার দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুল হক বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটা কােনোভাবেই ঠিক হয়নি।

রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযােগ করেনি। অভিযােগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএইস/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply