৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ: ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই উত্তরণের পথ খুঁজছে বিএনপি

|

সাইফুদ্দিন রবিন:

আজ ১ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির জন্ম। দেখতে দেখতে ৪৩ বছরে পা দিয়েছে দলটি। দেশের সংসদীয় ইতিহাসে তিন বার এবং সবমিলে চার বার রাষ্টের কর্তৃত্ব করা বিএনপি গত তিনটি নির্বাচনেই ক্ষমতার বাইরে। এদিকে, এক-এগারোর পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পড়া সংকট আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।

তবে, নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন তারা কক্ষচ্যুত হননি। বিরাজনীতিকরণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। আর শীর্ষ নেতারা বলছেন, করোনা মোকাবেলাসহ সামগ্রিক ব্যর্থতায় সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলাই এখন দলের মূল লক্ষ্য।

১৯৭৮ সালে ১৯ দফা কর্মসূচীর আলোকে তখনকার বিভিন্ন পেশার সফল ব্যক্তিদের দলে ভিড়িয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিএনপি প্রথমে সংকটে পড়ে। এরপর ১৯৮৩ সালে দলের হাল ধরেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় যায়। কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রোষানলে পড়ে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিএনপি। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দলে মতবিরোধ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যায় এবং ফলাফল বিপর্যয় ঘটে। এরপর মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় থেকেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে দলটি। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

এরমধ্যে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলাসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত হয় বিএনপি। আর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়া মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবেই আসে দলটির জন্য। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর চলতি বছরের মার্চে সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয় সরকার।

আর তারেক রহমানে লন্ডনে নির্বাসিত। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা এবং তারেক রহমানের দেশে আসাটা দুটোই অনিশ্চিত। দলের এই ক্রান্তিলগ্নে ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে কী ভাবছেন শীর্ষ নেতারা?

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, বিএনপিকে এখন দুটি বিষয় মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একটি রাষ্ট্রের দমন-নির্যাতন, অন্যটি দেশিয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও স্বায়ত্তশাসনে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল, যাকে একেবারে নির্মূল করার যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে, এটাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিএনপিকে। সবমিলে দলটির বেশ ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু মাথায় নিয়েই আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতে, গণতন্ত্রর মধ্যেই সবকিছু রয়েছে। এই মূলমন্ত্র নিয়েই বিএনপি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। সেটা বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া। গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ যদি উত্তরণ ঘটানো যায়, তাহলে জনমানুষের আকাঙ্খা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

বিএনপির কাছে এখন সবচয়ে বড় ইস্যু নির্বাচনী ব্যবস্থা। নেতাদের মতে, দেশে গণতন্ত্র ফেরানো গেলে রাজনীতি ও সামগ্রিক সব সংকট কেটে যাবে। ভাবনায় আছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতিকূলতা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে সরব হওয়ার শপথ নিতে চান তারা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দরকার হবে। তবে দু-একজন হয়ত চলে গেছে, কিন্তু বাকি দলগুলো তো আছে। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারলে সফল হওয়া যাবে বলেই বিশ্বাস করেন দলটির মহাসচিব।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply