করোনা হয়নি তবু নিতে হলো কোভিডের চিকিৎসা; বিল ৪ লাখ টাকা!

|

ভুক্তভোগী একেএম শাহজাহান।

আখলাকুস সাফা:

করোনা হয়নি, তবুও হাসপাতাল আর টেকনোলজিস্টের ফাঁদে পড়ে দিনের পর দিন নিতে হচ্ছে কোভিডের চিকিৎসা। এরইমধ্যে চার লাখ টাকা বিল হলেও চিকিৎসা শেষ হয়নি। এমন ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বেটার লাইফ হাসপাতালে। ভুক্তভোগীর নাম একেএম শাহজাহান। বয়স ৬৫ বছর। অন্য একজন রোগীর সনদ ঘষে-মেজে তাকে বানিয়ে দেয়া হলো করোনা পজেটিভ। পরে, নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও অজানা কারণে আমলে নেয়নি বেটার লাইফ হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন গিয়ে জানতে চাওয়া হলো, কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে ৭ দিন ধরে করোনার আইসোলেশনে রোগী? দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা জানান, রোগীর শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল। তবে সেটি নানা কারণেই হতে পারে বলে স্বীকার করেন তারা।

করোনার পজেটিভ রিপোর্টও দেখালো হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও যমুনা নিউজের হাতে একই নমুনার নেগেটিভ রিপোর্ট! কীভাবে সম্ভব?

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো হাঁড়ির খবর। গত ২৪ আগস্ট বেটার লাইফ হাসাপাতাল থেকে একেএম শাহজাহানের নমুনা সংগ্রহ করেন ল্যাব টেকনোলজিস্ট শাকিল আহমেদ। ২৭ আগস্ট ‘ডিএনএ সল্যুশন’ নামক একটি ল্যাবে জমা পড়ে সেই নমুনা। ২৯ তারিখ ফলাফল নেগেটিভ দিয়ে রিপোর্ট তৈরি হয়। কিন্তু এর আগেই ল্যাব টেকনোলজিস্ট শাকিল আহমেদ নিজেই আরেকজন রোগীর রিপোর্ট ঘষামাজা করে একেএম শাহজাহানকে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট প্রদান করেন। সেই মোতাবেক শুরু তার ব্যয়বহুল চিকিৎসা।

এ বিষয়ে যমুনা নিউজ কথা বলে ল্যাব টেকনোলজিস্ট শাকিল আহমেদের সাথে। প্রথমে পজেটিভ রিপোর্টের পক্ষে সাফাই গাইলেও এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন এই রিপোর্ট তারই বানানো। বলেন, আমার ভুলটা হচ্ছে, ঐ পাশ থেকে বারবার প্রেসারাইজ করছিল রিপোর্ট দেয়ার জন্য, তাই আমি নিজেই পজেটিভ দিয়ে রিপোর্ট দিয়ে দিছিলাম।

দুটো রিপোর্ট নিয়েই যাওয়া হলো ডিএনএ সল্যুশানে। কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল রিপোর্ট?
ডিএনএ সল্যুশন হেড অব অপারেশন্স ডা. মোহাম্মদ ফজলে আলম রাব্বী জানান, যে রিপোর্টটি পজেটিভ দেয়া হয়েছে সেটার বিপরীতে ল্যাবে অন্য আরেকজন রোগীর নাম আছে।

অর্থাৎ অন্য রোগীর রিপোর্ট জাল করে একেএম শাহজাহানকে করোনা পজেটিভ বানানো হয়েছে।

এই দায় কার- হাসপাতাল না ল্যাব কর্তৃপক্ষের? নাকি শুধুই এক ল্যাব টেকনোলজিস্ট শাকিলের কারণে ভুল চিকিৎসায় লাখ টাকা বিল দিতে হচ্ছে একেএম শাহজাহানকে? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি কেউই। তবে ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, শুরু থেকেই অবহেলার শিকার হচ্ছিলেন তারা। পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রোগীকে কেবিনে নেয়া হয়। রোগী করোনা আক্রান্ত বলা হলেও সেরকম কোনো চিকিৎসাও তাকে দেয়া হচ্ছিল না। সেখান থেকেই তাদের সন্দেহ তৈরি হয়।

ভুক্তভোগীর ছেলে শাহ মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, এরপর থেকে হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর কোনো ধরনের আস্থা নেই আমাদের। এ ঘটনার বিচার কার কাছে চাইবো, সেটিও বুঝতে পারছি না।

অভিযোগ আছে, কিছু ল্যাব টেকনোলজিস্ট হাসপাতালগুলোর সাথে যোগসাজশ করে পজেটিভ রিপোর্ট দিয়ে রোগী ভর্তি করিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করছে। এরই খেসারত দিতে হচ্ছে একেএম শাহজাহানদের।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply