মসজিদে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাসের আলাদা তদন্ত কমিটি

|

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিতাসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এসময় তিতাস গ্যাসের এমডি আলী মো: আল মামুন জানান, তদন্ত চলছে; তিতাসের গাফিলতি বা অবহেলা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে একই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছ। মূলত, গ্যাস লিকেজ ধরেই তদন্ত চলছে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় নিহতদের প্রত্যেককে বিশ হাজার টাকা এবং আহতদের দশ হাজার টাকা সাহায্য করার কথাও জানান জেলা প্রশাসক।

এর আগে, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ যে ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে শিশু-মুয়াজ্জিনসহ আরও ১১ জন মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটি সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল রাত ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুয়েল নামে ৭ বছরের এক শিশু মারা যাওয়ায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যু হলো।

একসাথে ছয়টি এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ১১ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সাব্বির, জামাল, দেওয়ান, জুয়েল, যুবায়ের, হুমায়ুন কবির, মোস্তফা কামাল, ইব্রাহিম, রিফাত, জুনায়েদ ও কুদ্দুস বেপারী। এ ঘটনায় এখনও যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের প্রত্যেকের শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় প্রায় সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।

এদিকে হতাহতের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হন। অনেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জন জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা অন্যান্য চিকিৎসকরাও যোগ দিয়েছেন দগ্ধদের চিকিৎসায়। প্রায় সবার শরীরের ৩৫ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর মসজিদের ভেতরে মেলে বিস্ফোরনের সূত্রপাতের চিহ্ন। মসজিদ ভবনের নিচ দিয়ে গেছে তিতাস গ্যাসের লাইন। সেখানে থাকা ছিদ্র দিয়ে বেরুচ্ছে গ্যাস ও পানি। স্থানীয়রা জানালেন, বেশ কয়েকদিন ধরে নামাজ পড়ার সময় গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন তারা। এনিয়ে বেশ কয়েকবার ইমাম ও মসজিদ কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌনে ৯টায় মসজিদের ভেতরে থাকা এসির বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের অনেকেই দগ্ধ ও আহত ছিলেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply