মসজিদে বিস্ফোরণে ৩ দিন ধরে গ্যাস নেই, দুর্ভোগে ২০ হাজার পরিবার

|

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তল্লা বাইতুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তল্লা ও সবুজবাগসহ আশেপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।

গত তিনদিন ধরে তল্লা ও সবুজবাগ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে হাড়ির চুলো জ্বলছে না। পাকা ভবন ও টিনের ঘরের ভেতরে ইট দিয়ে বাঁশ কাঠ জ্বালিয়ে অনেকে রান্না বান্নার কাজ সারছেন। গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরমদুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার গৃহিণীরা।

তল্লা কায়েমপুর ও গোদনাইল এলাকায় অবস্থিত ফকির নীট ওয়ার, মডেল ডি ক্যাপিটাল গার্মেন্টস, খাজা গার্মেন্টস ও নিট কর্নসার্নসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত স্বল্প আয়ের মানুষের বসবাস পশ্চিম তল্লা ও সবুজবাগ এলাকায়। পশ্চিম তল্লার বায়তুল সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা পর থেকে পশ্চিম তল্লা ও সবুজবাগ এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
করে রেখেছে। ফলে দু’টি এলাকার বাসিন্দারা রান্না-বান্না করতে না পেয়ে খাদ্য সংকটে ভুগছে। অনেকেই দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে কিংবা হোটেল থেকে খাবার এনে কোনো মতে দিনাতিপাত করছেন।

মসজিদে বিস্ফোরণে পর পর মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছিলেন মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। এরপর থেকেই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

তিতাস গ্যাস পশ্চিম তল্লার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে পশ্চিম তল্লা ও সুবজ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ফলে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। জ্বলছে না চুলো। এতে আমরা বাহির থেকে কখনো শুকনো খাবার খেয়ে সময় পার করছি।
এ দুটি এলাকার ২০ হাজার পরিবারের বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় চুলোতে হাড়ি জ্বলছে না।

একই এলাকার গৃহিণী রোজিনা ইসলাম জানান, মসজিদে বিস্ফোরণের পর পর তিতাস গ্যাস অফিসের লোকজন রাতের আঁধারে এসে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ দিয়েছেন। ফলে তিনদিন ধরে আমাদের গ্যাসের চুলোতে রান্নাবান্না করতে না পারায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে কলা রুটি খেয়ে কোনোমতে দিন যাপন করছি।

তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আশপাশের হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে বেশি দামে খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ আমাদের পক্ষে প্রতিদিন হোটেল থেকে কিনে এনে খাবার খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই দ্রুত পুনরায় গ্যাস সংযোগ প্রদান করে ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস লাইন মেরামতের দাবি জানান।

স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করেন, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শ্রমঘন এলাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকে তিতাস কর্মকর্তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্রুটিপূর্ণ লাইন মেরামত করে এলাকায় পুনরায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান।

একই এলাকার মো. শহিদ মিয়া বলেন, মসজিদে বিস্ফোরণের পর থেকেই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস না থাকায় চুলো হাড়ি জ্বলছে না। যদি দ্রুত এলাকায় গ্যাস সরবরাহ চালু না করা হয় তবে আমরা না খেয়েই মরে যাবো। তিনি দ্রুত এলাকায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোধ মফিজুল ইসলাম জানান, মসজিদে বিস্ফোরণের পর ফের যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এই কারণেই ওই এলাকার গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো। আশাকরি আগামীকাল সোমবারের মধ্যে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ লাইনে গ্যাসের সংযোগ দেয়া হবে। গ্যাসলাইনে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তবে তা পরীক্ষা করে সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, বিস্ফোরণের পরপরই নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্তকমিটির প্রধান হচ্ছেন উপ-মহাব্যবস্থাপক মোধ মফিজুল ইসলাম। তদন্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত চলাকালে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply