তদারকির অভাবেই নেত্রকোণায় ডুবছে ট্রলার, ১ মাসে ৩০ জনের মৃত্যু

|

কামাল হোসাইন, নেত্রকোণা:

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে নেত্রকোণায় দুটি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মোট ৩০ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং নির্ধারিত ঘাট ছাড়া যত্রতত্র পাড়ে ভিড়ানোকেই দোষছেন স্থানীয়রা। গত পাঁচ আগস্ট মদন উপজেলায় ট্রলার ডুবির ঘটনার ১৮ জনের শোক ভুলতে না ভুলতেই ফের কলমাকান্দা উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়নের রাজনগর এলাকায় বুধবার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পরিবারের মা ও দুই সন্তানসহ একই গ্রামের সাত জন জনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নাম পরিচয়সহ চার জনকে নিখোঁজ রেখেই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসন। আজ শুক্রবার দুপুরে এক শিশুসহ আরও দুই জনের লাশ নদীতে ভেসে উঠলে পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এছাড়া, ছয় জনকে জীবিত উদ্ধার করে এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের দেয়া তথ্যমতে এখনও নিখোঁজ আছেন, ইনাত নগরের ফাতেমা আক্তার (৪৫) ও মোফাজ্জল হোসেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সহ ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ডুবুরিদল উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ডুবুরি দল নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালিয়েও উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। তবে শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে রতন মিয়া (৩৫) ও মনিরা আক্তার (৪) নামে আরও দুই ব্যক্তির মরদেহ নদীতে ভেসে উঠলে পুলিশ উদ্ধার করে। উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল করিম।

নেত্রকোণার উচিতপুর হাওরে করোনাকালীন সময়ে চলাচলে প্রশাসনের কোনো তদারকি ছিল না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। যদিও ঘটনার পর কোনও পর্যটককে সেখানে ভ্রমণ করতে দেয়া হবে না এবং এলাকাবাসীকেও নৌযানে সীমিত আকারে চলাচলের জন্য বলা হয়েছিল। ঘটনার একমাস পেরুলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো আইনগত ব্যবস্থা। উচিতপুর ঘাটের স্থানীয় ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, পঞ্চাশ টাকা ঘাট ইজারার মধ্যে প্রতিদিন ট্রলার প্রতি জোর করে এক হাজার টাকা আদায় করা হয়। এসব কারণে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ে বাধ্য হন ট্রলার মালিকরা।

উচিতপুর ট্রলার ঘাটটি কয়েক বছর ধরে পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। বিভিন্ন উৎসবের সময় ছাড়াও বর্ষাকাল জুড়েই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষের পদচারণে মুখর হয়ে থাকে ট্রলার ঘাটটি। ফলে আরও বেশি মুনাফার আশায় এখানকার নৌকা ব্যবসায়ী ও মাঝিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের প্রতিযোগিতা। এ কারণে আগেও ঘটেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

মদন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আহমেদুল কবির জানান, ৩০ জন যাত্রীর জায়গায় প্রায় ৫০ জন যাত্রী বহন করায় এমন ঘটনা ঘটেছিল। তাছাড়া যেহেতু বর্ষাকালে যাতায়তের একমাত্র পথ নৌকা। সে কারণে এসব ঘাটে প্রশাসনিক তদারকি জোরদার করার উপর জোর দেন তিনি।

এদিকে মদনে ট্রলার ডুবির ঘটনার ঘটনার একমাস পেরোলেও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে, কলমাকান্দার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্যে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, কলমাকান্দা থাানর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল করিম ও কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের চারটি ইউনিটের সাত জন ডুবুরীসহ ২৭ জন কর্মী উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন খোঁজ মিলেনি। এখন তাদের খোঁজ পাওয়ার আর কোন আশা না থাকায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply